নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হলেও পর্যাপ্ত সংখ্যায় স্থায়ী অধ্যাপক নিয়োগ করা হয়নি। অগত্যা অতিথি অধ্যাপকদের ভরসাতেই এত দিন ধরে চলছিল পঠনপাঠন। চলছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজও। অথচ, দায়িত্বভার নিয়ে সেই অতিথি অধ্যাপকদেরই সাম্মানিক আটকে দিয়েছেন রেজিস্ট্রার! প্রশ্ন তুলেছেন অতিথি অধ্যাপকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও চাকরির বৈধতা নিয়ে! এই অবস্থায় উপাচার্য অতিথি অধ্যাপকদের পাশে দাঁড়ালেও রেজিস্ট্রারের হস্তক্ষেপে মাসিক সাম্মানিক বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁদের। টানা চারমাস বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করার পর এবার একটা হেস্তনেস্ত করতে চাইছেন দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অতিথি অধ্যাপকরা। সুবিচারের আশায় জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়ে জেলা প্রশাসনের প্রধানের হাতে একটি স্মারকলিপি তুলে দেন তাঁরা।
গোটা ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অতিথি অধ্যাপক রাজু পাল। তাঁর বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থায়ী অধ্যাপক নিয়োগ করতে সক্ষম হয়নি বলেই তাঁদের উপর পঠনপাঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জেলার ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁরাও সানন্দে অতিথি অধ্যাপকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর জন্য অনেকে নিজের গবেষণার কাজ পর্যন্ত স্থগিত রাখেন। শুধুমাত্র পড়ুয়াদের ক্লাস করানো নয়, সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জরুরি ও গোপন প্রশাসনিক কাজও করেন এই অতিথি অধ্যাপকরা।
এরই মধ্যে মাস চারেক আগে দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগ করা হয়। তিনি দায়িত্বভার নেওয়ার পরই অতিথি অধ্যাপকদের সাম্মানিক প্রদান বন্ধ করে দেন। তাঁর যুক্তি, এই অতিথি অধ্যাপকদের নাকি এভাবে অধ্যাপনা করানোর যোগ্যতা নেই এবং তাঁদের এই নিয়োগও নাকি বৈধ নয়! জেলাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি জমা দিতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে এই তথ্য প্রকাশ্যে আনেন রাজু পাল। তাঁর দাবি, তাঁরা আদৌ অধ্যাপনা করার যোগ্য কিনা এবং তাঁদের নিয়োগ বৈধ কিনা, সেই সিদ্ধান্ত প্রশাসনকেই নিতে হবে। সেই কারণেই জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি হিসাবে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা।
একইসঙ্গে রাজু জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য তাঁদের পাশে রয়েছেন। এমনকী তিনি অতিথি অধ্যাপকদের দু'মাসের সাম্মানিক মিটিয়ে দেওয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়াও সেরে ফেলেছেন। কিন্তু, তাতে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর না করায় গত চারমাস ধরে এক পয়সাও পারিশ্রমিক পাননি অতিথি অধ্যাপকরা। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, অতিথি অধ্যাপকদের তো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই নিয়োগ করেছে। তাহলে সেই নিয়োগ অবৈধ হয় কীভাবে? আর নিয়োগ প্রক্রিয়া যদি নিয়ম মেনেই হয়, তাহলে নবনিযুক্ত রেজিস্ট্রার তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কীভাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর আপাতত অধরা।