সামনে দুর্গাপুজো। তাই টাকার দরকার সবারই। সেখানে যদি রোজগার না করেই বড় অঙ্কের টাকা পাওয়া যায় তাহলে কি আর কেউ তা ফেরত দেয়! হয়তো অনেকেই দেয় না। আবার কোনও সৎ মানুষ আজও আছেন যিনি ফেরত দেন। নিজের অভাবের সংসার হলেও সততার পথেই হাঁটেন তিনি। হ্যাঁ, প্রায় লক্ষাধিক টাকা এক যাত্রী অটোয় ফেলে চলে যান। তবে সেই অটোচালক তা পেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হাতে তুলে দেন। আর এভাবেই সততা এবং মানবিকতার পরিচয় দিলেন ওই অটোচালক। শুনতে অবাক লাগলেও গোটা ঘটনা জানলে চমকে যাবে অনেকেই।
তখন নিম্নচাপের বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শুক্রবার রাতে বৃষ্টির দাপট বাড়তে থাকে। এমন আবহে অসমের গুয়াহাটি থেকে আসা এক যাত্রী অশোকনগর স্টেশন মোড় থেকে একটি অটো রিজার্ভ করেন। আর অটোচালক ওই যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বৃষ্টি মাথায় করেই রওনা হন। নগরউখড়া যাওয়ার কথা ছিল ওই যাত্রীর। কিন্তু অশোকনগর থানার কাজলা এলাকা আসতেই মাঝপথে নেমে পড়েন ওই যাত্রী। অটো থেকে নেমে অটোচালককে কিছু না বলে চলে যান। তবে অটোচালকের ভাড়া মিটিয়ে দিয়েছিলেন ওই যাত্রী।
আরও পড়ুন: আলু–পেঁয়াজ রফতানি স্বাভাবিক রাখার আর্জি ইউনুস সরকারের, পদ্মার ইলিশ অধরাই ভারতে
কিন্তু ওই যাত্রী মাঝপথে কেন নেমে যাচ্ছেন সেটা অটোচালককে কিছু জানাননি। তবে অটোচালক কিছুক্ষণ পর টের পান ওই যাত্রী টাকার ব্যাগ ফেলে গিয়েছেন। তখন ওই অটোচালক যাত্রীকে খুঁজতে এবং টাকার ব্যাগ ফিরিয়ে দিতে ছোটেন। নিজের অটোর জ্বালানি খরচ করে যাত্রী যেখানে নেমেছিলেন, সেখানেই যান ওই অটোচালক। কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায়নি যাত্রীকে। এমন পরিস্থিতিতে ওই রাতেই অশোকনগর থানায় পৌঁছন অটোচালক পলাশ দাশগুপ্ত। যাত্রীর ব্যাগে থাকা ৯৮ হাজার ৬৫০ টাকা এবং ব্যাগে থাকা অন্যান্য সামগ্রী জমা দেন। যা দেখে বেশ অবাকই হন পুলিশ অফিসাররা। এই গরিব অটোচালক ফেরত দিলেন এত টাকা!
সেই রাতটা এভাবেই কাটল। আজ, শনিবার সকালে দিলীপ সাহা নামের ওই যাত্রী অটোস্ট্যান্ডে এসে অটোচালকের সঙ্গে দেখা করেন। আর অটোচালক তখন ওই ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে থানায় আসেন। অটোচালক থানায় আসতেই সততার পুরস্কার হিসেবে অটোচালক অটো থেকে নামতেই থানার কর্তব্যরত কনস্টেবল তাঁকে স্যালুট করেন। আবার থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার চিন্তামণি নস্করও চেয়ার ছেড়ে উঠে অটোচালকের সঙ্গে হাত মেলান। পুলিশের উপস্থিতিতে অটোচালক পলাশ দাশগুপ্ত ওই টাকা এবং অন্যান্য সামগ্রী তুলে দেন যাত্রী দিলীপ সাহার হাতে। ব্যাগ ফিরে পেয়ে খুশি যাত্রী দীপকও। যাত্রী দিলীপবাবু বলেন, ‘আমার বাড়ি অসমে। ওখান থেকে দিদির বাড়িতে এসেছিলাম। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল। তাই অন্যমনস্ক ছিলাম। তাই ব্যাগ ছেড়ে নেমে গিয়েছিলাম। আমি অটোচালক ও পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।’