আতঙ্কে কাঁটা পুরো গ্রাম। হাঁসখালিতে নির্যাতিতা তরুণীর পরলৌকিক কাজ সম্পন্ন করতে রাজি হচ্ছিলেন না কেউ। শেষপর্যন্ত স্থানীয় সিপিএম নেতাদের সহযোগিতায় শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের যাবতীয় কাজ সারলেন নাবালিকার বাবা। তাঁরাই পুরোহিত এবং নাপিত ডেকে আনেন।
বৃহস্পতিবার হাঁসখালি ‘ধর্ষণকাণ্ডে’ নির্যাতিতা নাবালিকার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল। সেজন্য প্রয়োজনীয় আয়োজন করেছিলেন বাবা-মা। কিন্তু শেষমুহূর্তে বেঁকে বসেন পুরোহিত। কোনও পুরোহিতই আসতে চাইছিলেন না বলে দাবি করা হয়েছে। তারইমধ্যে বাড়িতে আসেন সিপিআইএম নেতাকর্মীরা। তাঁরাই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের বন্দোবস্ত করেন। ভয়ে কাঁটা হাঁসখালির পরিবর্তে রানাঘাট থেকে পুরোহিত এবং নাপিতদের আনা হয়। তারপর পরলৌকিক কাজ সারেন নাবালিকার বাবা-মা।
বিষয়টি নিয়ে সিপিআইএম নেত্রী দীপ্সিতা ধর বলেন, 'বাড়িতে পুরোহিত ঢুকতে পারবেন না, মেয়ের পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন না বাবা-মা। হাঁসখালির নির্যাতিতার আজ (বৃহস্পতিবার) ছিল পারলৌকিক ক্রিয়ার দিন। যে পুরোহিত ও নাপিত ঠিক করে রাখা হয়েছিল, ভয়ে তাঁরা আসেননি। এলাকার দাপুটে তৃণমূল (কংগ্রেস) নেতার ছেলে ঘটনায় অভিযুক্ত, কে আর আসতে চাইবেন! খবরটা কানে যায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) কর্মীদের কাছে। হুমকিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে পরলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে এনে, পুরোহিত ও নাপিত নিয়ে আসেন কর্মীরা। তারপর মেয়ের পারলৌকিক ক্রিয়া করে বাবা-মা। পরিবারের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি সর্বদা রয়েছে।'
আরও পড়ুন: হাঁসখালিতে নাবালিকার বাড়িতে CBI আসতেই লোডশেডিং, বিদ্যুৎ এল ১ ঘণ্টা পরে
হাঁসখালি ‘ধর্ষণকাণ্ড’
গত ৪ এপ্রিল হাঁসখালিতে নবম শ্রেণির এক নাবালিকা তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ছেলের আয়োজিত জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিলেন। রাতের দিকে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেন এক মহিলা। সেইসময় অসুস্থ ছিলেন নাবালিকা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরে পরদিন হয় তাঁর। কিন্তু অভিযুক্তদের চাপে ময়নাতদন্ত বা ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয় বলে অভিযোগ। গত শনিবার তৃণমূল নেতার ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন নাবালিকার পরিবারের সদস্যরা।
হাঁসখালি ‘ধর্ষণকাণ্ডে’ সিবিআই তদন্ত
মঙ্গলবারই হাঁসখালির ‘ধর্ষণকাণ্ডে’ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। চরম ভর্ৎসনার মুখে পড়েন সরকারি আইনজীবী। কেন দেরিতে মামলা দায়ের হয়েছে, তা বলতে পারেননি তিনি। কী তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে, তা নিয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলতে ব্যর্থ হন। এমনকী আদালতে পেশ করা কেস ডায়েরির সঙ্গে সরকারি আইনজীবীর দেওয়া তথ্য মেলেনি। বিচারপতি মন্তব্য করেন, যা কেস ডায়েরিতে নেই তা আদালতে বলবেন না। সেই নির্দেশ মতো ইতিমধ্যে হাঁসখালিতে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই।