মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশনে বিস্ফোরণে আইইডি (IED) ব্যবহার করা হয়েছে— বুধবার রাতের ঘটনার পর এমনই একটা তত্ত্ব সামনে আসে। এবার সেই তত্ত্বেই শিলোমোহর দিলেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। নিমতিতা স্টেশনের ২ নম্বর প্লাটফর্মে ঘটনাস্থলে থাকা একটি গর্ত দেখেই আইইডি বিস্ফোরণের সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, সাধারণত আইইডি বিস্ফোরণের ক্ষেত্রেই বিস্ফোরণের তীব্রতায় এমন গর্ত হয়ে যায়। উল্লেখ্য, উন্নত বিস্ফোরক যন্ত্রকেই সংক্ষেপে বলা হয় আইইডি (Improvised Explosive Device)।
বুধবার রাতে কলকাতায় যাওয়ার ট্রেন ধরতে নিমতিতা স্টেশনে হাজির হন রাজ্যের শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল কর্মী–সমর্থক ও অনুগামীরা। সে সময়ই আচমকা প্রবল বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হন তিনি। ঘটনার পরপরই তদন্তের ভার যায় সিআইডি–র হাতে। শুক্রবার সেই তদন্তের স্বার্থে দফায় দফায় নিমতিতা স্টেশনের ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে দেখেন ফরেনসিক দল ও বম্ব স্কোয়াডের সদস্যরা। বুধবার থেকেই চলছে স্টেশনজুড়ে তল্লাশি।
সূত্রের খবর, এদিন তদন্তের পর সিট (SIT) বা বিশেষ তদন্তকারী দলকে নিজেদের রিপোর্টে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় বিশেষজ্ঞদের তৈরি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন আইইডি ব্যবহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যান্টি হ্যান্ডিং ডিভাইস। এ ধরণের আধুনিক বিস্ফোরক যন্ত্র সাধারণত ব্যবহার করে বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন জামাত–উল–মুজাহিদিন (জেএমবি) বা অন্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি। তাই এই ঘটনায় জঙ্গি–যোগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।
পাশাপাশি ঘটনার যে ভিডিও সামনে এসেছে তাতে দেখা গিয়েছে বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগেই প্ল্যাটফর্মে পড়ে থাকা একটি ব্যাগ সরাতে যান মন্ত্রীর এক অনুগামী। আর সেই ব্যাগে হাত দিতেই বিস্ফোরণ ঘটে। ব্যাগে হাত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অ্যান্টি হ্যান্ডিং ডিভাইস ব্যবহার করার জেরে ব্যাগে হাত দিতেই বিস্ফোরণ হয়েছে। তাঁদের দাবি, ওই ব্যাগেই আইইডি বিস্ফোরক রাখা ছিল। মুর্শিদাবাদের অন্যতম ব্যস্ত স্টেশনে ব্যস্ত সময়ে সুপরিকল্পিতভাবে এই অপারেশন যেমন চালানো হয়েছে তাতে এর নেপথ্যে জেএমবি বা অন্য জঙ্গি সংগঠন জড়িত রয়েছে— সিট–কে এমনই ইনপুট দিয়েছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালে মন্ত্রী জাকির হোসেনের পায়ে অস্ত্রোপচার হয়ে গিয়েছে। আপাতত তিনি সিসিইউ–তে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকদের কড়া নজরদারিতে রয়েছেন। শীঘ্রই তাঁর ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গের চিকিৎসা ও পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করবেন প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রাথমিকভাবে মন্ত্রীর দেহের তিনটি জায়গায় প্লাস্টিক সার্জারির পরিকল্পনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই হামলার ঘটনার পরই জাকির হোসেনের নিরাপত্তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, জেলা পুলিশের অনুমোদন মিললেই ‘জেড’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেতে পারেন মন্ত্রী জাকির হোসেন।