আগুনের লেলিহান শিখায় ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে হেরিটেজ হলং বাংলো। একদা এখানে আসতেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। এই বাংলোর আটটি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদ জলদাপাড়ার হলং বাংলোতে ভয়াবহ আগুন লাগে। তিন মাসের জন্য এই হলং বাংলো বন্ধ ছিল। সেই অবস্থায় কেমন করে আগুন লাগল সেটা নিয়ে আলোড়ন পড়ে যায়। আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করে বনদফতর। এই কমিটির সদস্যরা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ওই কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে শর্ট সার্কিট থেকেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে এই অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্য ‘ইঁদুরের ভূমিকা’ আছে বলে রিপোর্টে লেখা হয়েছে।
এদিকে বনদফতর যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। কারণ ওই রিপোর্টে লেখা আছে, বাংলোয় কোনও পর্যটক ছিলেন না। সুতরাং বন্ধ ছিল এসি, গিজারের কানেকশন। হলং বাংলো রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য মাঝেমধ্যে বারান্দার লাইট জ্বালানো হতো। এখানে ইঁদুরের কাণ্ড নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। সুইচ বোর্ডের পিছনে ফাঁকা অংশ দিয়ে ইঁদুর ঢুকে পড়ত। আর তারাই বিদ্যুতের তার কেটে দেয়। আর সেখান থেকেই শর্ট সার্কিট ঘটে। ১৫ জুন থেকে জঙ্গল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলোয় কোনও পর্যটক ছিলেন না। মেইন সুইচ অন ছিল রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার জন্য। হলং বাংলোয় ইদুঁরের দৌরাত্ম্যের অভিজ্ঞতা আছে পর্যটকদের। তাই ইঁদুরের দৌরাত্ম্যেই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে বলে মনে করছেন অফিসাররা।
আরও পড়ুন: জলাশয় বাঁচাতে জিও ট্যাগ করছে বিধাননগর পুরনিগম, অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে ভরাট ঠেকাতে
অন্যদিকে আগুন লাগার সময়ে হলং বাংলোর কর্মীরা কাছাকাছিই ছিলেন। তাঁরা পোড়া গন্ধ পেয়ে ছুটে আসেন আগুনের অনুসন্ধানে। হলং বন বাংলো শীতের দিকে খুলে দেওয়ার কথা ছিল। এখানে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হতো। যাতে বেশি পরিমাণে পর্যটক আসতে পারে। সেখানে এসি মেশিন ফেটে যাওয়ার পর আগুন গোটা হলং বন বাংলোর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখায় ছাই হয়ে যায় হলং বনবাংলো। ওই কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলোয় কাঠের রং এবং পালিসের জন্যই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে সূত্রের খবর।
এছাড়া ৫৭ বছরের পুরনো হলং বাংলো ঐতিহাসিকও বটে। এখানে শুকনো কাঠ দ্রুত জ্বলে উঠেছিল আগুনে। আর বাংলোয় কাঠের রং এবং পালিসের জেরেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার পর রাজ্যের অন্য পর্যটন কেন্দ্রের বাংলোগুলিও নতুন করে দেখার কাজ শুরু হয়েছে। বন দফতরের ৬ সদস্যের কমিটি রাজ্যের সমস্ত জায়গায় আগুন প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখছে। তারা রাজ্যের সর্বত্র ঘুরে দেখবেন কোথায় কী সমস্যা রয়েছে। তারপর তা নিয়েও তাঁরা রিপোর্ট দেবেন বলে সূত্রের খবর।