কোভিডের জোড়া ঢেউয়ের ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি ভারত৷ এরইমধ্যে হাজির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন৷
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারগুলিকে লেখা চিঠিতে এ নিয়ে সতর্কবাণী দিয়েছে৷ তারা বলেছে, নয়া ভ্যারিয়েন্ট তিনগুণ বেশি সংক্রামক৷ তাই চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে হবে৷ কোনও এলাকায় আক্রান্তের হার ১০ শতাংশের বেশি হলে পরিস্থিতি বিপদসীমায় পৌঁছে গেছে এমনটা ধরে নিতে বলে হয়েছে৷ তাছাড়া অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধাযুক্ত হাসপাতালের আইসিইউ বেডের ৪০ শতাংশ যদি পূর্ণ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রেও বুঝতে হবে পরিস্থিতি বিপজ্জনক৷
কেন্দ্রের বিশেষ কমিটি ইতিমধ্যেই পূর্বাভাস দিয়েছে, জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারিতে ভারতে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে৷ তাই রাজ্যে-রাজ্যে চিকিৎসা পরিকাঠামো প্রস্তুত রাখার উপর জোর কেন্দ্রীয় সরকারের৷
ওমিক্রন চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে জরুরি জিনোম সিকোয়েন্সিং অর্থাৎ ডিএনএর ক্রমবিন্যাস খতিয়ে দেখা হয়৷ এই পদ্ধতির মাধ্যমে জেনেটিক কোড পরপর সাজিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে কোথাও কোনও গলদ আছে কিনা৷ কিন্তু কলকাতা-সহ দেশের বড় শহরগুলিতে জিনোম সিকোয়েন্সিং করার যথেষ্ট পরিকাঠামো আছে কি?
জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় কলকাতার অদূরে নদিয়ার কল্যাণীতে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়ো-মেডিকেল জিনোমিক্স নামক সংস্থায়৷ কিন্তু সেখানে চারটের মতো জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে দিনতিনেক সময় লেগে যাচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে এই বিপুল জনসমষ্টিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে এত সংখ্যক জিনোম সিকোয়েন্সিং কীভাবে সম্ভব হবে?
চিকিৎসক মহলে অবশ্য এ ব্যাপারে বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে৷ চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘কল্যাণীর সংস্থায় অত্যাধুনিক পরিকাঠামো রয়েছে৷ সেখানে বড় সংখ্যায় জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্ভব বলে আমি জানি৷ নতুন ভ্যারিয়েন্টয়ের চরিত্র বুঝতে এই পদ্ধতি জরুরি৷’
যদিও ভাইরোলজিস্ট ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেন, ‘গোড়ায় আরটিপিসিআর টেস্ট করাতে সমস্যা হচ্ছিল৷ পরিকাঠামো ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছে৷ এখন হাজার-হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ কিন্তু সেভাবে জিনোম সিকোয়েন্সিং এখনই সম্ভব হবে না৷ যেখানে পরীক্ষা করাই এই রোগ নির্ণয়ের চাবিকাঠি, সেক্ষেত্রে পরিকাঠামো না থাকা খুবই উদ্বেগের৷’ কীভাবে নয়া ভ্যারিয়েন্টের মোকাবিলা সম্ভব, এমন প্রশ্নে চিকিৎসকরা বলছেন, ‘আমাদের হাতে চারটে হাতিয়ার রয়েছে৷ মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখা ও ভ্যাকসিন দেওয়া৷’
চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘ব্যাপক টিকাকরণের ফলে ভাইরাস আটকাতে আমরা এখন অনেকটাই সক্ষম৷ নতুন ভ্যারিয়েন্টের পরিপ্রেক্ষিতে টিকা কতটা কাজ করবে, সেটা পরে বোঝা যাবে৷ তবে বিশ্বজুড়ে টিকাকরণ না হলে অতিমারী রোখা যাবে না৷ সেক্ষেত্রে সব বিমানবন্দর একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে৷’
তবে চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ বলেন, ‘ভাইরাস নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ক্রমাগত মিউটেশন চালিয়ে যায়৷ সেটা বিদেশে হবে কিন্তু এদেশে হবে না, এভাবে বলা যায় না৷ তাই বিদেশ থেকে যাতায়াত বন্ধ করে সমস্যা মিটবে না৷’
নয়া ভ্যারিয়েন্টের বিপদ যখন অপেক্ষারত তখন উৎসবের উদ্দীপনাও তুঙ্গে৷ বড়দিন ও বর্ষবরণে মেতে উঠেছে কলকাতা৷ রাজ্য সরকার বিধির কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করেছে উৎসবের জন্য৷ আর এতে বিপদ দেখছেন চিকিৎসকরা৷ তবে চিকিৎসকরা আশার কথা শোনাচ্ছেন৷ ডা. পুণ্যব্রত গুণ বলেন, ‘ডেল্টা থেকে তিনগুণ বেশি সংক্রামক ওমিক্রন৷ কিন্তু এর মারণ ক্ষমতা কম৷ তাই কোভিড বিধি মেনে চললে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ উৎসবে গা ভাসালে মুশকিল৷ প্রয়োজনে বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজের উপর জোর দিতে হবে৷’
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)