'দুয়ারে দুয়ারে সরকার' কর্মসূচির আওতায় জোরকদমে চলছে 'স্বাস্থ্যসাথী' প্রকল্পের কাজ। যে প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের সব মানুষকে সরকারি স্বাস্থবিমার আওতায় আনতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। যার পরিমাণ বছরে পাঁচ লাখ টাকা। একইসঙ্গে চালু হয়েছে 'স্বাস্থ্যসাথী' প্রকল্পের স্মার্টকার্ডও।
নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যে রাজ্যে সাড়ে সাত কোটি মানুষ 'স্বাস্থ্যসাথী' প্রকল্পের আওতায় আছেন। সেই সরকারি স্বাস্থ্যবিমার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করে রাজ্যের সব বাসিন্দাকেই 'স্বাস্থ্যসাথী' প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের আরও আড়াই কোটি বাসিন্দাকে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা হবে। তার ফলে রাজ্যের প্রায় ১০ কোটি মানুষের কাছে স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পৌঁছে দিতে চলেছে মমতা সরকার।
যাঁরা এতদিন 'স্বাস্থ্যসাথী' প্রকল্পের আওতায় ছিলেন না, তাঁদের নথিভুক্তিকরণের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। 'দুয়ারে দুয়ারে সরকার' কর্মসূচির মাধ্যমে সেই আড়াই কোটি মানুষ 'স্বাস্থ্যসাথী' প্রকল্পে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
'স্বাস্থ্যসাথী' প্রকল্প
রাজ্যের প্রতিটি পরিবার 'স্বাস্থ্যসাথী' প্রকল্পের স্মার্টকার্ড পাবে। তাতে পরিবারের সকলের তথ্য থাকবে। কার্ডগুলি পরিবারের প্রধান হিসেবে বয়স্কতম মহিলা সদস্যের নামে হবে। সেই কার্ড দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতালেও নিখরচায় পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা মিলবে। আর সরকারি হাসপাতালে তো বিনামূল্যেই চিকিৎসা পরিষেবা মেলে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গ এবং ভিন রাজ্যের ১,৫০০ নির্ধারিত হাসপাতালে মিলবে 'স্বাস্থ্যসাথী' প্রকল্পের সুবিধা।
কীভাবে আবেদন করবেন?
১) অনলাইনে 'স্বাস্থ্যসাথী'-র ওয়েবসাইট থেকে আবেদনের ফর্ম (ফর্ম-বি/Form-B) ডাউনলোড করতে হবে। গ্রাম পঞ্চায়েত বা ওয়ার্ড অফিস থেকে অফলাইনেও সেই আবেদনের ফর্ম (ফর্ম-বি/Form-B) সংগ্রহ করা যাবে।
২) নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে সেই ফর্ম পূরণ করতে হবে। পরিবারের বয়স্কতম মহিলা সদস্যকে প্রধান হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে মোবাইল নম্বর, আধার কার্ড এবং রেশন কার্ডের নম্বর। পরিবারের বাকি সদস্যদেরও আধার কার্ড এবং রেশন কার্ডের নম্বর দিতে হবে।
৩) তারপর সেই ফর্ম নির্ধারিত গ্রাম পঞ্চায়েত বা ওয়ার্ড অফিসে জমা দিতে হবে। সঙ্গে প্রত্যেক সদস্যদের আধার কার্ড বা রেশন কার্ডের ফোটোকপি জমা দিতে হবে। নাহলে সরকারের একটি সচিত্র পরিচয়পত্রের ফোটোকপি দিতে হবে।
৪) 'স্বাস্থ্যসাথী' প্রকল্পের সার্ভারে সেই ফর্ম তোলা হবে। তারপর আবেদনকারীদের নথিভুক্ত মোবাইল নম্বরে মেসেজ (এসএমএস) পাঠানো হবে। তাতে লেখা থাকবে, ‘স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের জন্য আপনার আবেদন এসএনএ পোর্টাল আইডি-জেলা কোড/চলমান ক্রমিক নম্বর-সহ নথিভুক্ত হয়েছে।’
৫) প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি নির্দিষ্ট রেজিস্ট্রেশন নম্বর (ইউনিক রেজিস্ট্রেশন নম্বর) তৈরি হবে। তা আবেদনকারীদের নথিভুক্ত মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে।
৬) সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে নথিভুক্তকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। রসিদে যে স্থান এবং সময়ের উল্লেখ করা আছে, সেখান থেকে স্মার্টকার্ড পাওয়া যাবে। সরকারি কর্মীরা সেই রসিদ আবেদনকারীদের বাড়িতে দিয়ে আসবেন।
৭) রসিদে যে জায়গা এবং সমযের উল্লেখ আছে, সেইমতো পরিবারের সকলকে যেতে হবে। আঙুলের ছাপ এবং ছবি তুলে তখনই স্মার্টকার্ড নিতে পারবেন।
নির্দিষ্ট দিনে নথিভুক্তকরণ ক্যাম্পে না গেলে কী করতে হবে?
তাতে কোনও অসুবিধা হবে না। আবারও নথিভুক্তের সুযোগ মিলবে। স্থায়ী নথিভুক্ত কেন্দ্র, ব্লক অফিস বা মহকুমা অফিস বা বরো অফিসে যে কোনও কর্মদিবসে গিয়ে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করা যাবে।
পরিবারের কোনও সদস্য সরকারি স্বাস্থ্যবিমা বা স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রকল্পের সুবিধা পান, তাহলে কি 'স্বাস্থ্যসাথী'-তে আবেদন করা যাবে?
না, করা যাবে। এক্ষেত্রে পরিবারের কোনও সদস্য যদি কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার বা ইসিআইয়ের বিমায় অন্তর্ভুক্ত থাকেন, তাহলে 'স্বাস্থ্যসাথী' কার্ডের আবেদন করা যাবে না।
পরিবারের কোনও সদস্য যদি সরকারি চিকিৎসা ভাতা পান, তাহলে কি 'স্বাস্থ্যসাথী'-তে আবেদন করা যাবে?
হ্যাঁ, করা যাবে। তবে সংশ্লিষ্ট সদস্য বর্তমানে যে প্রকল্পের প্রকল্পের আওতায় আছেন, তা ছেড়ে দিতে হবে। তবেই 'স্বাস্থ্যসাথী'-র আবেদন করতে পারবেন।
বেসরকারি স্বাস্থ্যবিমা বা মেডিক্লেম থাকলে কি আবেদন করতে পারবেন?
হ্যাঁ, পারবেন। যাঁরা ইতিমধ্যে সরকারি স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আছেন, তাঁরা শুধুমাত্র 'স্বাস্থ্যসাথী'-র জন্য আবেদন করতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
১) স্মার্টকার্ড পুনরায় নবীকরণ করতে পারে না।
২) সব নবজাতক শিশু থেকে এক বছর পর্যন্ত মায়ের কার্ডে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
৩) 'স্বাস্থ্যসাথী' সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের জন্য টোল ফ্রি নম্বর ১৮০০-৩৪৫-৫৩৫৮-তে যোগাযোগ করতে পারবেন। অথবা 'স্বাস্থ্যসাথী'-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (swasthyasathi.gov.in) যেতে পারেন। অথবা গুগল প্লে স্টোর থেকে 'স্বাস্থ্যসাথী' অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন।