শ্রেণিকক্ষের ব্ল্যাকবোর্ডে এখনও লেখা রয়েছে। তা দেখে বোঝা যাচ্ছে এখানে পড়াশোনা চলত। কারণ বাংলা ব্যাকরণ লেখা রয়েছে। এটা শিশু শিক্ষাকেন্দ্র সেটাও বুঝতে কারও অসুবিধা হবে না। কারণ শিশুদের হাতে আঁকা নানা কিছু দেওয়ালে দৃশ্যমান। তার সঙ্গে জ্বলজ্বল করছে নানা রঙের শিক্ষামূলক ছবি। এখানের দোতলা ভবনে চারটি ঘর। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, শ্রেণিকক্ষের দরজা–জানলা কেউ বা কারা খুলে নিয়েছে। খোলা হয়েছে ইলেকট্রিক ওয়্যারিংয়ের তারও। এখানেই সন্ধ্যা নামলে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে মদ–গাঁজার আসর বসে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। জগৎবল্লভপুরের চংঘুরালি বিদ্যাসাগর শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে এখন নেশার আসর বসে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন আগেও এই স্কুলে নিয়মিত চলত লেখাপড়া থেকে শুরু করে গান–খেলা। মিড–ডে মিলও খেত খুদে পড়ুয়ারা। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে এই স্কুলে আর কিছুই হয় না। কয়েকজন মানুষ হাওড়ার জগৎবল্লভপুর ব্লকের দক্ষিণ চংঘুরালি মান্নাপাড়ার স্থানীয় কিছু পড়ুয়া নিয়ে শিশু শিক্ষাকেন্দ্রটি শুরু করেছিলেন। তাঁরা পেশায় শিক্ষক–শিক্ষিকা ছিলেন। শিশুদের জীবনে শিক্ষার আলো জ্বালাতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০২ সালে এই ভবন গড়ে ওঠে। তখন ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন সুবোধ মান্না।
আরও পড়ুন: আবার দুই বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেফতার, এপারে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে থাকছিল দত্তপুকুরে
এখানেই একসময় রমরম করে চলত শিশু শিক্ষাকেন্দ্রটি। আজ যেসব অভিভাবকরা সন্তানদের প্লে–স্কুলে দেন এটা ছিল তেমনই স্কুল। কিন্তু আজ সবই স্মৃতি। তবে সুবোধ মান্না বলেন, ‘স্থানীয় মাজু গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে প্রথমে নিজস্ব শিশু শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা করি। তার জন্য ৮২ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছিল। পরে ভবনের কাজ শেষ করতে আরও টাকা আসে। বালিপোতা মাঠ এলাকায় শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের ভবন গড়ে ওঠে। তখন দু’জন শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়। ৫০ জন পড়ুয়া ছিল। তাদের জন্য নিয়মিত চলত মিড ডে মিল।’ তারপর ঠিক কী ঘটল? জানা যাচ্ছে, পাঁচ বছর আগে ওই দুই শিক্ষিকার অবসর হয়। আর নিয়োগ হয়নি। পড়ুয়ার সংখ্যা শূন্য হয়ে যায়। পাশের প্রাথমিক স্কুলে চলে যায় বাকি শিশুরা।
এখন কী হয় এখানে? স্থানীয় সূত্রে খবর, শিশু শিক্ষাকেন্দ্র এখন বন্ধ। প্রত্যেক সপ্তাহের রবিবার দিন চলে বিবেকানন্দ যোগা সেন্টার। এখানের বাসিন্দা শৈল মান্নার বক্তব্য, ‘স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাশের চংঘুরালি বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে খুদে পড়ুয়ারা। প্রশাসনও উদাসীন।’ এলাকার যুবক বাবটু সেনের কথায়, ‘শিক্ষকের অভাবে এত সুন্দর পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও শিশু শিক্ষাকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেল।’ স্কুলশিক্ষা বিভাগের অনুমোদিত এবং পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এই শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ স্বপন কাঁড়ারের কথায়, ‘নতুন করে আর শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষক–শিক্ষিকা নিয়োগ হচ্ছে না। তাই ওই সব পড়ুয়াদের পাশের স্কুলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এই ভবনটি যাতে অন্য কোনও কাজে লাগানো যায় সেটার আবেদন করব।’