আরজি কর আন্দোলনের প্রথম সারিতেই ছিলেন প্রবীণ চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। পূর্ব বর্ধমানের ডেপুটি চিফ মেডিক্যাল অফিসার পদে কর্মরত এই চিকিৎসককে এবার বদলি করা হল দার্জিলিংয়ের টিবি হাসপাতালে। ২১ বছরের কর্মজীবনে এই নিয়ে ১৪ বার বদলির মুখে পড়লেন সুবর্ণ। তৃণমূল সরকারের আমলে তাঁকে আটবার বদলি করা হয়। আর তারপরই চিকিৎসক মহলের একাংশের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, আরজি কর আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্যই কি প্রতিবাদী চিকিৎসক এমন ‘পুরস্কার’ পাচ্ছেন? সুবর্ণ অবশ্য এমন ‘পুরস্কার’-এ ভয় পান না বলেই জানালেন।
‘শিরদাঁড়া সোজা রাখার পুরস্কার’
হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে চিকিৎসক জানালেন, ‘এই বদলিকে শিরদাঁড়া সোজা রাখার পুরস্কার হিসেবেই দেখছি। বর্তমান সরকারের আমলে এটা আমার কাছে নতুন নয়। এই নিয়ে অষ্টমবার বদলি হচ্ছে। এভাবে প্রতিবাদ আটকানো যাবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আগেও সরব হয়েছি, আগামী দিনেও হব।’
আরও পড়ুন - ফের প্রতিহিংসার অভিযোগ রাজ্যের বিরুদ্ধে, ৪ চিকিৎসকের বিরদ্ধে দায়ের হল FIR
উত্তরবঙ্গ প্রসঙ্গ
আরজি কর আন্দোলনের সময় উত্তরবঙ্গ লবির কথা বহুবার শিরোনামে এসেছে। এর আগেও বদলির সূত্রে সাত বছর উত্তরবঙ্গে ছিলেন সুবর্ণ। তাঁর কথায়, ‘সাত বছর উত্তরবঙ্গে থাকাকালীনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলাম। তখনই আমাকে বদলি করে বর্ধমানে নিয়ে আসা হয়।’
‘শাসক ঘনিষ্ঠরা বছরের পর বছর…’
যে চিকিৎসকরা শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, তাঁদের সঙ্গে নিজেদের ফারাকটাও বুঝিয়ে দিলেন সুবর্ণ। তাঁর কথায়, ‘বদলিযোগ্য চাকরিতে বদলি নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু এবার যে বদলিটি হল, সেটি নিচু পদে অর্থাৎ লোয়ার র্যাঙ্কে। পাশাপাশি রোগীসংখ্যাও বিশেষ নেই। ফলে বদলির আসল উদ্দেশ্য একেবারে স্পষ্ট। শাসক ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে এখানেই আমাদের তফাৎ। শাসক ঘনিষ্ঠরা বছরের পর বছর একই স্থানে তাঁদের পছন্দের জায়গায় থাকেন। কিন্তু আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি বলেই আমাদের নানা জায়গায় পাঠানো হয়।’
‘এভাবে কণ্ঠরোধ করা যাবে না’
সুবর্ণর কথায়, ‘বিচারের দাবিতে পথে নেমেছিলাম বলেই আমাদের এত হয়রানির শিকার হতে হয়। কখনও লালবাজার থেকে ডেকে পাঠানো হয়, কখনও সল্টলেকে ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানায় মেডিক্যাল কাউন্সিলকে দিয়ে অভিযোগ দায়ের করানো হয়। কিন্তু এভাবে আমাদের কণ্ঠরোধ করা যাবে না। দার্জিলিং থাকি বা বর্ধমান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আগেও প্রতিবাদ করেছি, ভবিষ্যতেও করব।’