চার ছেলে মেয়ে। কিন্তু, কেউ দেখত না। ভিক্ষাবৃত্তি করেই কাটত দিন। ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া ঘরে একাই থাকতেন তিনি। সেই ভিক্ষুকের মৃত্যুর পর তার ঘর থেকে উদ্ধার হল কয়েক লক্ষ টাকা। তা দেখে রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ বৃদ্ধার ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে স্থানীয়দের। বৃদ্ধার ঘর থেকে গুপ্তধন উদ্ধারের খবরে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার বেলিয়া চকপাড়ায়।
আরও পড়ুন: ছয় বাচ্চার সংসার ছেড়ে ভিখারীর সঙ্গে পালিয়েছে বউ, দাবি স্বামীর, উঠল পালটা অভিযোগ
জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধার নাম আনিসুর বেওয়া (৮০)। শনিবার বিকেলে বার্ধক্য জনিত অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তখন তাঁর ছেলেমেয়েরা বাড়িতে ছুটে আসেন। সেখানে তারা বিভিন্ন কাপড়ের পুঁটুলি খুলতেই বেরিয়ে আসে লক্ষ লক্ষ টাকা। সবমিলিয়ে এই টাকার পরিমাণ হল ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৪১৪ টাকা। ১০ টাকার নোট থেকে শুরু করে তাতে ছিল ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকার নোট। টাকা গোনার জন্য রীতিমতো এলাকার মাতব্বরদের ডাকা হয়। সবমিলিয়ে ১০ জন ওই টাকা গোনেন। বৃদ্ধার সন্তানদের উপস্থিতিতে এই টাকা গোনা হয়।
কিন্তু, কোথা থেকে এল এত পরিমাণ টাকা?
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, বৃদ্ধার স্বামী বেঁচে থাকতেই চার ছেলে মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর বৃদ্ধাকে আর কোনও ছেলে মেয়ে দেখতো না। তখন তিনি একাই থাকতে শুরু করেন। আর সেইসঙ্গে পেট চালানোর জন্য ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন। সেই ভিক্ষাবৃত্তি থেকে তিনি যে টাকা উপার্জন করতেন তার সামান্য অংশই খরচ করতেন। এইভাবে তিলে তিলে তিনি এই পরিমাণ টাকা জমিয়েছিলেন।
জানা গিয়েছে, মৃত্যুর আগে ওই বৃদ্ধা এক প্রতিবেশীকে তাঁর শেষ ইচ্ছায় কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন। প্রতিবেশী দাবি করেন, বৃদ্ধা তাঁকে বলেছিলেন মৃত্যুর পর তাঁর জমানো টাকা যেন ধর্মীয় স্থানে অর্থাৎ মসজিদ, ইদগাহ বা গোরস্থানের উদ্দেশ্যে দান করা হয়। রবিবার দুপুরে তাঁর মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়। পরে তাঁর ছেলে মেয়ে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বৃদ্ধার ঘরে রাখা বাক্স ও কাপড়ের পুঁটুলিতে বৃদ্ধার সারা জীবনের সঞ্চয় করা অর্থ খুঁজে পায়। বৃদ্ধার এক ছেলে জানান, তিনি পরিবারের সঙ্গে অন্য জায়গায় থাকতেন। তাই তিনি মায়ের দেখাশোনা করতে পারেননি। তিনি জানান, গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে তাঁর মায়ের ঘর থেকে এই টাকা পাওয়া গিয়েছে। তাঁর মায়ের শেষ ইচ্ছা মতোই জমানো টাকা ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে দান করা হবে বলে তিনি জানান।