'নিজেকে নিঃস্ব করে না চাইলে যে কোনও কিছুই জয় করা যায় না!' এই কথা যাঁর মুখে শোনা গিয়েছে তিনি একজন পর্বতপ্রেমী ও পর্বতারোহী। নাম - সুমন বসু। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে তাঁর এই মন্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। উপলক্ষ্য, তাঁর স্ত্রী - পেশায় ইংরেজি শিক্ষিকা আর নেশায় এবং ভালোবাসায় একজন পর্বতারোহী - রুম্পা দাসের এভারেস্ট জয়ে স্বপ্নপূরণের লড়াই! যে লড়াই সফল করতে নিজের বাড়ি পর্যন্ত বন্ধক দিয়েছেন সুমন!
এই বাড়ি বন্ধক দেওয়া নিয়েই সুমনকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিক। জানতে চেয়েছিলেন - 'এত টাকা দেনা। তার উপর বাড়িও বন্ধক দিতে হল। নিঃস্ব হয়ে যাবেন না?' সেই প্রশ্নের জবাবেই এই প্রতিবেদনের একেবারে শুরুর মন্তব্যটি করেন সুমন!
তথ্য বলছে, সুমনের হাত ধরেই পাহাড়কে ভালোবাসতে শিখেছেন রুম্পা। বিয়ের পর থেকেই এই দম্পতি ট্রেকিংয়ে গিয়েছেন। একসঙ্গে রক ক্লাইব্লিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে একে একে অভিযান চালিয়েছেন - ৬,১৫৩ মিটার উচ্চতার মাউন্ট স্টক কাংড়ি (২০১৫), ৬,৮৬৪ মিটার উচ্চতার চ্যাংব্যাং (২০১৬), ৭,১২০ মিটার উচ্চতার ত্রিশুল-১ ও ৬,৩৮৭মিটার উচ্চতার ব্লাক পিক (২০১৭), ৭,৪১৬মিটার উচ্চতার সাসের কাংড়ি ও ৬,১৬২ মিটার উচ্চতার গ্যাংস্ট্যাং (২০১৮) এবং ৬,২৬৫মিটার উচ্চতার দেবাচেন (২০১৯)-এ!
অবশেষে ২০২১ সালে কৃষ্ণনগরের 'ম্যাক'-এর (মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ কৃষ্ণনগর) প্রতিনিধি হিসাবে এভারেস্ট জয়ের উদ্দেশে রওনা দেন রুম্পা। সফলভাবে অনেকটা পৌঁছেও যান। কিন্তু, হঠাৎই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মারাত্মক হারে (৪২) কমে যায়। ফলত, তাঁকে দ্বিতীয় বেস ক্যাম্পে নামিয়ে আনতে হয়। পরে কাঠমাণ্ডুর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে জানা যায়, করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন রুম্পা।
সেবার এভারেস্ট জয় না করেই ফিরতে হয়েছিল রুম্পাকে। তথ্য বলছে, সেই অভিযানের জন্য খরচ হয়েছিল প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা! ধার করে এবং স্বামী-স্ত্রীর সঞ্চয় ভেঙে সেই টাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। তার ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেননি সুমন-রুম্পা। এর মধ্যেই আবারও এভারেস্ট অভিযানে যাচ্ছেন রুম্পা। এবারের বাজেট প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। হাতে সম্বল বলতে ছিল বসতবাড়িটুকু। স্ত্রীর স্বপ্নপূরণ করতে সেই বাড়িও বন্ধক দিয়েছেন সুমন!
আর রুম্পা বলছেন, এবার তাঁকে কোনও কিছুই আটকাতে পারবে না। শৃঙ্গজয় তাঁকে করতেই হবে। এভারেস্টের চূড়ায় পতাকা না উড়িয়ে কিছুতেই ফিরবেন না তিনি! তাঁর এই আত্মপ্রত্যয়কে কুর্নিশ জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী অসীমকুমার মণ্ডল। এবারের অভিযানের নেতৃত্ব ম্যাক-এর পক্ষ থেকে তাঁর কাঁধেই তুলে দেওয়া হয়েছে। অসীমও একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ পর্বতারোহী। আগামী ৩১ মার্চ হাওড়া স্টেশন থেকে মিথিলা এক্সপ্রেসে রওনা দিচ্ছেন রুম্পা ও অসীম।