‘আই অ্যাম দ্য বিগেস্ট হ্যাকার অফ ওয়ার্ল্ড। আফগানিস্তানের বাসিন্দা। আমরা বাংলা ভাষা জানি।’ রীতিমত পরিচয় দিয়ে ইস্পাত কর্তার পরিবারের ফোন হ্যাক করল হ্যাকাররা। দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের উচ্চপদস্থ কর্তা ও তাঁর পরিবার হ্যাকারদের কবলে পড়েছেন। ঘটনা ঘিরে আতঙ্কে ছড়িয়েছে ওই ইস্পাত কর্তার পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে।
দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের ওই কর্তার স্ত্রীর অভিযোগ, কে টিভি দেখছেন, কে ঘর থেকে বেরোচ্ছেন, সবই জেনে যাচ্ছে হ্যাকাররা। এভাবেই দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের কর্তার পরিবার সমেত ফোন হ্যাক করল সাইবার জালিয়াতরা।
ওই আধিকারিকের পরিবারের সমস্ত সদস্যের তথ্য পাচার হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁরা কাদের সঙ্গে কী কথা বলছেন বা কোথায় কী মেসেজ পাঠাচ্ছেন, তা সমস্ত কিছু ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। গোটা পরিবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ফোনগুলো তালা দিয়ে রাখা হয়েছে আলমারিতে।
গত ১০ জুলাই দুর্গাপুর থানার সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ দায়ের করেন ওই আধিকারিক। তবে এখনও পরিস্থিতি একই রয়েছে। ওই ইস্পাত কর্তার অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। কমিশনারেটের ডিসি অভিষেক গুপ্তার নেতৃত্বে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট এর উচ্চপদস্থ কর্তা ওই প্লান্টের টাউনশিপের আবাসনেই সপরিবারে থাকেন। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা। সবার কাছেই রয়েছে স্মার্টফোন। অভিযোগকারী আধিকারিকের জানিয়েছেন, গত দু’মাস ধরে তাঁর পরিবারের চারটি স্মার্টফোনই হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে। কিন্তু কেন তাঁদের ফোন হ্যাক করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনও আলোকপাত করেনি হ্যাকাররা।
ঘটনার সূত্রপাত হয় চলতি বছরের মে মাসে। ইস্পাত কারখানা ওই আধিকারিকের পঞ্চম শ্রেণিতে পাঠরত ছেলের অনলাইন ক্লাস চলছিল। ক্লাস চলাকালীন আচমকা স্কুলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে লেফট হয়ে যায় তিনি। এর পর থেকেই ওই ফোন দিয়ে তাঁদের পরিচিত আত্মীয়দের কাছে এসএমএস ও হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ পাঠাতে শুরু করে হ্যাকাররা।
ঘটনার পরেই হ্যাকাররা নিজেদের পরিচয় দিয়ে এসএমএসও করে। সেখানে তারা জানায়, ‘আমি হ্যাকার, তোমাদের ফোন হ্যাক করছি’। শুধু তাই নয়, ওই পরিবারের সমস্ত গতিবিধির উপর নজর রাখছে হ্যাকাররা বলে অভিযোগ। এখানেই শেষ নয়, তাঁরা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কার সঙ্গে দেখা করছে, এমনকী টিভিতে কী চলছে। সমস্ত আপডেট ঘণ্টায় ঘণ্টায় এসএমএসে ওই কর্তার পরিবারকে জানানো হত। তখনই তাজ্জব হয়ে যান ওই কর্তার পরিবার।
ওই ইস্পাত কর্তা যে থানার দ্বারস্থ হয়েছেন, সেটাও জানতে পারে অভিযুক্তরা। ওই কর্তাকে ব্যাঙ্কের সমস্ত টাকা হ্যাক করে নেওয়ার ভয়ও দেখানো হয় বলে অভিযোগ।ওই কর্তার স্ত্রীর অভিযোগ, মোবাইল ফোন অফ করলেও সেটি অন করে দিচ্ছে হ্যাকাররা! তাই মোবাইল ফোনগুলো সুইচ অফ করে আলমারির তুলে রাখা হয়েছে, যাতে আর কেউ কিছু দেখতে ও শুনতে না পায়।