পঞ্চায়েত প্রধানের পদে থেকেই নাইট গার্ড হিসেবে তুলেছেন বেতন। এমনই অভিযোগ উঠেছে নদিয়ার রানাঘাট ১ নম্বর ব্লকের হবিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা তৃণমূল নেতা গোপাল ঘোষের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে তিনি বছরের পর জনসাস্থ্য ও কারিগারি দফতরের নাইট গার্ড হিসেবে বেতন তুলেছেন। খোদ বর্তমান প্রধান গোপাল ঘোষের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন। বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রানাঘাটের রাজনীতিতে। একইসঙ্গে দফতর প্রাক্তন প্রধানকে বেতনের সব টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: রায়গঞ্জে তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে হামলা, বোমা–গুলির ঘটনায় তদন্ত
জানা গিয়েছে, বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধান মমতা বিশ্বাস গোপালের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে বেতন নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করলে বিষয়টি সামনে আসে। এই পঞ্চায়েতে ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর ধরে প্রধান পদে ছিলেন গোপাল ঘোষ। পঞ্চায়েতের অধীনে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের পাম্প হাউস ও জলাধারে এক নাইট গার্ড হিসেবে নিজের নাম বসিয়ে দেন পঞ্চায়েত প্রধান। এরপর নাইট গার্ড হিসেবে তিনি নিজেই সই করে বছরের পর বছর বেতন তুলতে থাকেন। অভিযোগ উঠেছে, প্রভাব খাটিয়ে এই বেআইনি কাজ করেছিলেন তিনি। তবে সেই সময় তৃণমূলের অন্দরে বিষয়টি জানাজানি হলেও কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি।
সূত্রের খবর, সেই সময় রানাঘাট ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন ব্লক সভাপতি তাপস ঘোষের দাপট ছিল। তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত গোপাল। তবে একাধিক অভিযোগকে ঘিরে ২০২৩ সালে তাপস গোষ্ঠী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ফলে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোপালকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। তবে নির্দল প্রার্থী হিসেবেই গোপাল নির্বাচনে লড়েন এবং জয়ী হন। পরে আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন। মমতা বিশ্বাস গোপালের নিরাপত্তারক্ষীর কাজের কাগজে সই করতে রাজি হননি। তিনি তখন জানতে পারেন যে গোপাল নিজেই নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে বেতন তুলছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকে জানানোর পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান। দফতর তদন্ত চালিয়ে জানতে অভিযোগ সত্য। মমতার অভিযোগ, কাজ না করে নাইট গার্ড হিসেবে প্রতি মাসে টাকা তুলেছেন গোপাল। এটা বেআইনি। অন্যদিকে, রানাঘাট এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ ঘোষ জানিয়েছেন, তৃণমূল এই ধরনের কাজকে সমর্থন করে না। তিনি নিজেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি জানান।
এদিকে, অভিযুক্ত প্রাক্তন প্রধান গোপাল ঘোষ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।পালটা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে দায়ী করে দফতর কেন টাকা দিয়েছে সেই প্রশ্ন তোলেন। তাঁর দাবি, সেই সময় দফতরের তৎকালীন পদস্থ কর্তারা বিষয়টি জানতেন। একইসঙ্গে, তিনি দাবি করেছেন প্রধান হওয়ার অনেক আগে থেকেই তিনি অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ক্ষোভের অভিযোগ তুলেছেন গোপাল। তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন। দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, নিয়ম মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।