বাংলাদেশে অস্থিরতা। সংখ্যালঘু বিশেষ করে করে হিন্দুদের ওপর হামলা। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। আর তার জেরে এবার শিলিগুড়ির অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
শিলিগুড়ি একটি পর্যটন গন্তব্য হিসাবে জনপ্রিয়ভাবে পরিচিত এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত করে। এটি শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাণিজ্যের একটি প্রধান কেন্দ্র।
পশ্চিমবঙ্গে শিলিগুড়ির কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম, তিনটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত- নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভুটানে সুবিধাজনক প্রবেশাধিকার রয়েছে এই শিলিগুড়ির মাধ্যমে।
পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে বহু মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। দর্শনার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। শিলিগুড়ি হয়েই দার্জিলিংয়ে যান বহু বাংলাদেশি পর্যটক।
কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির পর মূলত ভিসা ইস্যুর জন্য ভারতে আসা বাংলাদেশিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে শিলিগুড়ির হোটেল শিল্পে।
বেশির ভাগ নামিদামি হোটেল ফাঁকা। অনেক বাংলাদেশি বুকিং বাতিল করেছেন। শিলিগুড়ি-ঢাকা রেগুলার বাস সার্ভিস পরিচালনাকারী বাস অপারেটরগুলোও গত সাত দিনে একজন যাত্রীও না পেয়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চেয়েছে শিল্পমহল।
‘শিলিগুড়ি সীমান্তের খুব কাছে। এটি শিক্ষা ও চিকিৎসার কেন্দ্রবিন্দু। পার্বত্য অঞ্চল হওয়ায় পর্যটকরা শিলিগুড়িতে ভিড় করেন, কারণ এটি দার্জিলিং এবং অনুরূপ এলাকার সাথেও সংযুক্ত,’ শিলিগুড়ির এক হোটেল ম্যানেজার সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন।
শিলিগুড়ির এক হোটেল ব্যবসায়ী বিপিন কুমার গুপ্তা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের যে কোনও ইস্যু ভারতকেও জর্জরিত করে। বাংলাদেশিরা ভারতে আসা নিয়ে তাদের পরিকল্পনা বাতিল করায় শিলিগুড়ির শিক্ষা ও চিকিৎসা পর্যটন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এতে হোটেল ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ একটি প্রতিবেশী দেশ। তাই আশেপাশে যে সমস্যা, অশান্তি বা অন্য কিছু দেখা দেবে, তার সরাসরি প্রভাব পড়বে আপনার এখানে। তাই আমাদের শিলিগুড়ি শহরে বেশি প্রভাব পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ এর বেদনা ও অভিজ্ঞতা আমরা সরাসরি অনুভব করতে পারি। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে, আমাদের জীবিকার ওপর। অগস্ট মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। আমি সরকারের কথা বলব না, কিন্তু খারাপ রাজনৈতিক পরিবেশ আমাদের ব্যবসাকে প্রভাবিত করছে। কারণ সেখান থেকে নতুন ভিসা আপডেট করা হচ্ছে না। নতুন ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না কাউকেই। বয়স্করা কষ্ট করে এখানে আসছেন। তাই এটা একটা সমস্যা। শিক্ষাগত ভিসার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা এখানে আসতে ভয় পায়। যদিও ভারতের অবস্থা বাংলাদেশের মতো নয়, যেমনটা আমরা টিভিতে দেখেছি। আমি টিভিতে দেখেছি যে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের জন্য পরিস্থিতি সেখানে খুব খারাপ। তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। এমনটা হওয়ার কথা নয়। সরকারের উচিত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা। কারণ এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ভারতে। বিশেষ করে শিলিগুড়ি ও উত্তরবঙ্গে। এবার রাজনৈতিক পরিবেশের প্রভাব সরাসরি দেখা গেল হোটেল ব্যবসায়। পিক সিজনেও দর্শনার্থীর অভাব অনুভূত হয়েছিল। বাংলাদেশি পর্যটকরা আসেন শপিং, দার্জিলিং, শিলিগুড়ি বা কমলিম্পংয়ে পড়াশোনার জন্য, অথবা শুধু ঘুরে বেড়ানোর জন্য। বেশ কয়েকটি গ্রুপ পর্যটক, যারা ছয় মাস আগে হোটেলে রুম বুক করেছিলেন, তারাও তাদের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের সব আত্মীয়-স্বজন সেখানকার সংখ্যালঘুদের অবস্থার কারণে হতাশ। সেখানকার সংখ্যালঘুদের রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
শিলিগুড়ির হোটেল ম্যানেজার বিকাশ দাস জানিয়েছেন, তাঁরা সকলেই চেয়েছিলেন দু'দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হোক।
তিনি বলেন, 'আমরা চাই দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক, যাতে বাংলাদেশ থেকে আগের মতো অতিথিরা এখানে আসেন।
ইন্দো-বাংলাদেশ বাস অপারেটর শিবপ্রসাদ ঘোষ সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, আগে বাস ঢাকা থেকে পর্যটকে পূর্ণ থাকত। কিন্তু এবার আমরা একজন যাত্রীও পাইনি।
'আমি পরিবহণের কাজ করি। আমরা শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের ঢাকা পর্যন্ত যাই। আমরা এখন কাজ করতে পারছি না। তারা যদি ভিসা না দেয়, তাহলে মানুষ এখানে আসবে কীভাবে? বাসগুলো এখন কাজ করছে না, লোকসান গুনছে। আমরা চাই এই সমস্যা সমাধানে দুই দেশ একযোগে কাজ করুক। তারা সংলাপ ও কূটনীতিতে ফিরে এলে সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে। তাই আমরা চাই দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করুক। জানিয়েছেন তিনি।
This story has been published from a wire agency feed without modifications to the text. Only the headline has been changed.