উত্তরবঙ্গ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত। টানা প্রবল বর্ষণে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং একের পর এক জেলা কার্যত জলমগ্ন। নদী-নালা উপচে পড়েছে, গ্রাম থেকে শহর ঘরবাড়ি জলে তলিয়ে গেছে একাধিক জায়গায়। এই বিপর্যয়ের সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে বন্যপ্রাণে ভরা উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলে। জলদাপাড়া, গরুমারা, ডুয়ার্সে ভয়াবহ পরিস্থিতি।
আরও পড়ুন: কলকাতাকে ছাপিয়ে গেল পাহাড়! কতটা বৃষ্টি হল দার্জিলিংয়ে? বিচ্ছিন্ন জলদাপাড়া
জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের বহু অংশই ডুবে গিয়েছে। গন্ডার, হাতি, বাইসন, হরিণের আবাসস্থল এই জঙ্গল। সেখানে এখন জলের স্রোত। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রবল বৃষ্টির রাতে নদীর জলে ভেসে গেছে একাধিক বন্যপ্রাণ। শালকুমারহাটের শিশামারা নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে পড়েছে নেপালিবস্তি, নতুনপাড়া ও জলদাপাড়া বাজারে। ফলে বহু মানুষ ও গবাদিপশু জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, জলদাপাড়ার একাধিক এলাকায় গন্ডার ও হরিণ ভেসে যেতে দেখা গেছে। আলিপুরদুয়ারের তোর্সা নদীতে এক বিশালাকার গন্ডারকে ভেসে যেতে দেখা যায়। পরে কোচবিহারের একটি নদীতে দেখা যায় আরেকটি গন্ডারকে জলে উঠে আসতে। দুটি কি একই প্রাণী? তা এখনও স্পষ্ট নয়। আবার জলঢাকা নদীতে এক হরিণকে ভেসে যেতে দেখে স্থানীয়রা প্রাণপণ চেষ্টা করে উদ্ধার করে বনকর্মীদের হাতে তুলে দেন।
শনিবার রাতের প্রবল বর্ষণের পর উত্তরবঙ্গজুড়ে মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। দার্জিলিং জেলায় এখনও পর্যন্ত অন্তত ২৩ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। যদিও প্রশাসনের আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ডুয়ার্সের চা বাগানগুলিতেও ভয়াবহ চিত্র। মালবাজারের ঘীস নদীর জল বাড়ায় ওদলাবাড়ি-মানাবাড়ি চা বাগান এলাকায় আটকে পড়ে প্রায় এক ডজন বুনো হাতি, যার মধ্যে কয়েকটি ছিল শাবক। শ্রমিকরা হাতিদের জঙ্গলে ফেরানোর চেষ্টা করলেও প্রবল স্রোতের কারণে ব্যর্থ হন। পরে জল কিছুটা নামলে হাতির দলটি জঙ্গলে ফিরে যায় বলে জানা গেছে।
ভুটানের পাহাড় থেকে নেমে আসা অতিরিক্ত জলের স্রোতে গরুমারা জাতীয় উদ্যানে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। ময়নাগুড়ির রামসাই এলাকায় গরুমারার এক গন্ডারের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে বনকর্মীরা। অন্যদিকে, শিলিগুড়ির কাছে মেচি নদীতে ডুবে গেছে একটি হস্তিশাবক। প্রায় ৩০ হাতির দল নদী পার হচ্ছিল, তখনই দলছুট হয়ে পড়ে শাবকটি এবং জলে ডুবে তার মৃত্যু হয়।
বন দফতর পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ডিএফও পারভীন কাশোয়ান জানিয়েছেন, একটি গন্ডারকে নদীতে ভাসতে দেখা গেছে, পরে সেটি নিজে থেকেই ওপরে উঠে আসে। এখন সবচেয়ে বড় চিন্তা হল এই দুর্যোগে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা জল কমলেই বোঝা যাবে।