যে কোনও ধরনের আতসবাজি থেকে তৈরি বায়ুদূষণ করোনা রোগীদের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। শব্দবাজির ক্ষতিকর প্রভাব তো আছেই। তাই কালীপুজো, দীপাবলি, কার্তিকপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো ও ছটপুজো— নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত এই গোটা উৎসবের মরশুমে সম্পূর্ণভাবে বাজি কেনা, বিক্রি ও পোড়ানো নিষিদ্ধ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু সব বিধিনিষেধের পরও গোপনে রমরমিয়েই চলছে বাজির কারবার। কোথাও কোথাও পুলিশ–প্রশাসনের নাকের নীচ থেকে বাজি বিক্রি চলছে। আর এ নিয়ে ছড়াচ্ছে উদ্বেগ।
কালো রঙের প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বা বাড়ি থেকে নিয়ে আসা বাজারের ব্যাগেই পছন্দের আতসবাজি, এমনকী নিষিদ্ধি শব্দবাজি নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ সর্বত্র একই ছবি। রবিবার মালদার রথবাড়ি নেতাজি কমার্শিয়াল মার্কেট কমপ্লেক্সের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ থাকলেও সামনের শাটার বন্ধ রেখে পাশের শাটার খোলা ছিল একটি দোকানের। আর সেখান থেকেই পুলিশ–প্রশাসনের নজর এড়িয়ে দেদার বাজি বিক্রি হতে থাকে।
মালদা শহরের কমার্শিয়াল মার্কেট, চিত্তরঞ্জন মার্কেট–সহ বিভিন্ন বাজারের একই ছবি। এমনকী স্টেশনারি দ্রব্যের দোকান, পানের দোকান থেকেও গোপনে বিক্রি হচ্ছে বাজি। অনেকে পুলিশের নজরদারি না থাকার অভিযোগ তুলেছেন। যদিও বিক্রেতাদের বক্তব্য, বাজি নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই তাঁরা অনেক টাকার বাজি কিনে ফেলেছেন। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীরা আর সেই বাজি ফেরত নিতে চাইছেন না। অনেক টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। তাই একপ্রকার নিরুপায় হয়েই আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
এদিকে, রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর এলাকার রায়গঞ্জ–বালুরঘাট রাজ্য সড়কের ধারে বেশ কয়েকটি স্টেশনারি দোকান থেকে বাজি বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই। কারণ, দোকানে কোনও বাজি রাখা নেই। কোনও ক্রেতা এলে তাঁদের চাহিদা জেনে তা একটি কাগজে লিখে বাড়ি চলে যাচ্ছেন বিক্রেতা। তার পর বাড়ি থেকে প্লাস্টিকে ভরে এনে পছন্দের বাজি তুলে দিচ্ছেন ক্রেতাদের হাতে। এক–হাত বাজি, আর এক–হাত টাকা। বাজি–ব্যবসা চলছে এভাবেই।
বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে এভাবেই গোপনে আতসবাজি ও শব্দবাজি বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ। দোকানে বাজির দেখা নেই, কিন্তু ঠিক জায়গায় তা রাখা রয়েছে। পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে এভাবেই চলছে দেদার ব্যবসা। এ ব্যাপারে রায়গঞ্জ থানার আইসি সুরজ থাপা জানান, বাজি যাতে বিক্রি না হয় তা দেখতে নিয়মিত অভিযান চলছে। কিছু ধরপাকড়ও হয়েছে। ওদিকে, বেপরোয়া এই বাজি ব্যবসা নিয়ে উদ্বেগে জেলা তথা রাজ্যের চিকিৎসকরা। কারণ, বাজির ধোঁয়া করোনা রোগী–সহ অন্য অনেকের কাছেই বিষ।
উল্লেখ্য, বাজি ব্যবসার সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত রাজ্যের ৩১ লক্ষ মানুষ। তাঁদের ক্ষতির কথা ভেবে সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত অন্তত ৫৩ হাজার ব্যবসায়ীকে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল বাজি ব্যবসায়ী সংগঠন। যদিও আদালত ক্ষতিপূরণের ব্যাপারটি রাজ্য সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে।