তাহলে কি পৃথক উত্তরবঙ্গের সমর্থন করছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব? বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবিয়ার একটি টুইট ঘিরে তেমনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
রবিবার একটি টুইটবার্তায় মালবিয়া বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ তৈরি হওয়ার প্রাথমিক কারণ ছিল অমুসলিম (রাজ্য) গঠন করা। পশ্চিমবঙ্গ শুধুমাত্র একটি জমির অংশ নয়, বরং তা হল একটি ভাবধারা। যেখানে মুক্ত ভাবনার বাঙালি হিন্দুরা বেঁচে থাকতে পারবেন এবং সমৃদ্ধশালী হতে পারবেন। কিন্তু সেই ভাবধারাকে লঙ্ঘন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। যা জনতাত্ত্বিক পরিবর্তনে উৎসাহ জোগাচ্ছে।’
এবারের বিধানসভা ভোটের পর থেকেই একটি মহল থেকে পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবি ভেসে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিল তৃণমূল এবং বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তারইমধ্যে পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবি শোনা যায় আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লার গলায়। সম্প্রতি তিনি বলেন, 'ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর থেকে হিংসা থামার কোনও নামগন্ধ নেই। বিজেপি কর্মীদের দোকান বন্ধ করে দিচ্ছে, রুটি রুজি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শুধু বিজেপিকে ভোট দেওয়ার অপরাধে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হবে না, প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনার সুবিধা মিলবে না, এটা কেমন উন্নয়ন? কী উন্নয়ন হয়েছে তৃণমূল আমলে? খালি ডুয়ার্স কন্যা, উত্তরকন্যা বানালে উন্নয়ন হয় না। কম করে ৩৫০ চা বাগান রয়েছে। তবুও এখানকার মানুষ ভিনরাজ্যে কাজে যেতে বাধ্য হন।' তাঁর দাবি, চিন, ভুটান, বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেরা উত্তরবঙ্গে শান্তি ও সুরক্ষার স্বার্থে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করবেন।' সঙ্গে যোগ করেন, ‘হাইরোডে কারা বসেছেন? সব বাংলাদেশিরা বসেছেন। ওঁদের সব সুবিধা। বাংলাদেশেও রেশন কার্ড আছে, ভোটার কার্ড আছে। এখানেও সব সুবিধা পাচ্ছেন। আমাদের লোক কোথায়? আমাদের লোকের রেশন কার্ড নেই। এই দেখেই আমি দেখলাম সবাই বলছেন, দাদা আমায় সুরক্ষা দিন। কিন্তু কোথায় যাব সুরক্ষার জন্য? সে কারণে কেন্দ্রকে বলেছি, আমি জানি যে এখানে জনগণ কী পরিস্থিতিতে রয়েছেন। ভোটের ফলাফল বের হওয়ার পরেও সন্ত্রাস হয়েছে। এরপর জনগণ থেকে আওয়াজ উঠেছে যে উত্তরবঙ্গ আলাদা হলে আমরাও সুরক্ষিত থাকব। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হলেও আমরা সুরক্ষিত থাকব।’
সেই দাবির মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, 'বাংলা ভাগের দিকে যাঁরা তাকাবেন, বাংলার মানুষ তাঁদের উপযুক্ত জবাব দেবেন। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ দুটোই আমার প্রিয়। দুটোই কন্যা। কোথাও কোথাও দক্ষিণবঙ্গের থেকেও উত্তরের কাজ বেশি হয়েছে।সমস্তটা ঢেলে সাজানো হয়েছে। দিল্লি কা লাড্ডু খাবে, সমস্ত ভবিষ্যৎ বিক্রি করে দিয়ে। উত্তরবঙ্গকে পরাধীন হতে দেব না। বিজেপির এই দাবিকে ধিক্কার জানাই।'
পরদিনই রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, বাংলাকে বিভক্ত করার কোনও পরিকল্পনা নেই গেরুয়া শিবিরের। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় জনতা পার্টির কাছে এমন কোনও ইস্যু নেই। আমাদের দলের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কোনও দাবি করেননি। বিভিন্ন ইস্যু তুলে বিজেপির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।' কিন্তু দিলীপের সেই মন্তব্যের পর এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই মালবিয়ার টুইটে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে।