তাহলে কি সত্যিই সংসারের 'মন কষাকষি' চরমে উঠেছে? মুকুল রায়ের কলকাতায় ফেরার পর বিজেপি নেতাদের প্রশ্ন এড়ানোর প্রবণতায় সেই জল্পনা ক্রমশ বাড়ছে। পুরো ঘটনা নিয়ে বিজেপির অন্দরে রীতিমতো অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের ঘুঁটি সাজানোর বৈঠকের মাঝপথেই দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন মুকুল। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করেছিলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখতেই প্রথম দিন বৈঠক করেই মুকুল ফিরে যাচ্ছেন। যদিও সেই ‘সামাজিক দূরত্ব’-এর মাধ্যমে দিলীপ কোনও ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা নিয়ে সারাদিন রাজনৈতিক মহলের জল্পনা চলে। এরইমধ্যে মুকুল আবার দাবি করেন, চোখের ইঞ্জেকশন নিতে কলকাতায় ফিরে এসেছেন।
বিজেপি সূত্রে অবশ্য খবর, বুধবার দিল্লির বৈঠকে একটি রিপোর্ট নিয়ে দিলীপ ও মুকুলের মধ্যে তর্ক শুরু হয়। তা ক্রমশ ‘বাদানুবাদ’-এ গড়ায়। তারপর বৃহস্পতিবার দিলীপের দিল্লির বাসভবনে বৈঠকে আর যোগ দেননি মুকুল। গেরুয়া শিবিরের অপর একটি অংশের দাবি, সেই ‘বাদানুবাদ’ একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। বরং তার সলতে দীর্ঘদিন ধরেই পাকানো হচ্ছিল। সংগঠনের অন্দরে যাবতীয় ক্ষমতা নিজেদের দখলে রেখেছেন দিলীপ ও রাজ্য সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। অন্য দল থেকে যোগ দেওয়া নেতা বা অন্যান্য নেতাদের কোণঠাসা করে দেওয়া হয়েছে। দিল্লি থেকে নয়া কমিটি তৈরি করে দেওয়া হলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সেই কমিটির ভূমিকা কার্যত শূন্য। তার জেরে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ জমছিল বলে দাবি এক বিজেপি নেতার। তাঁর বক্তব্য, দিল্লিতে সেই প্রসঙ্গ উঠে আসায় সংঘাত চরমে পৌঁছাতেই পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আর সেখানেই অস্বস্তিতে পড়েছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু সাফাই দেন, দিল্লিতে কী ঘটেছে, তা তাঁর পুরোপুরি জানা নেই। শনিবার তিনি দিল্লি তে গিয়ে হয়তো জানতে পারবেন, কিছু ঘটেছিল কিনা। সায়ন্তনের সেই মন্তব্যও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত রাজনৈতিক মহলের। তাদের বক্তব্য, দিল্লিতে ‘মন কষাকষি’-র কথা একেবাপে উড়িয়ে দেননি সায়ন্তন। তা থেকেই স্পষ্ট, দিল্লিতে কিছু একটা হয়েছিল, যাতে রীতিমতো অস্বস্তিতে বিজেপি নেতারা। আর সেই কারণে মুকুল সংক্রান্ত প্রশ্ন না গিলতে পারছেন, না ফেলতে পারছেন।
তবুও সায়ন্তনকে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ দেওয়া গেলেও বাবুল সুপ্রিয়ের ‘কিছু না জানা’ মনোভাবে ‘বাদানুবাদ’-এর বিষয়টি কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের। তাঁদের বক্তব্য, বাবুল তো দিল্লিতেই ছিলেন। যদি সত্যিই কিছুই না হত, তাহলে ‘বাদানুবাদ’-এর জল্পনা ওড়ানোর পথে হাঁটলেন না কেন বাবুল? আর সেই প্রশ্ন মুখ টিপে হাসছেন রাজ্য বিজেপির কয়েকজন নেতা।