অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ধসে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। পাহাড়ের রাস্তাঘাট, গ্রাম ও নদী উপচে পড়া বন্যায় বিপর্যস্ত জীবন। এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের। ক্ষতিগ্রস্ত বহু ঘরবাড়ি, আশ্রয়হীন অসংখ্য মানুষ। এর মাঝেই নিখোঁজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র হিমাদ্রি পুরকাইত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের পারুলিয়া উপকূল থানার দক্ষিণ কামারপোল গ্রামের বাসিন্দা হিমাদ্রি কয়েকদিন ধরে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে ছিলেন। সেখান থেকে কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তাঁর। ফলে উদ্বিগ্ন যুবকের পরিবার।
আরও পড়ুন: প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত, উত্তরবঙ্গে শমীক, রাজ্য সরকারকে তোপ
হিমাদ্রি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি পাহাড়ে ভ্রমণ ছিল তাঁর নেশা। কখনও ট্র্যাভেল গাইড, কখনও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতেন পাহাড়ি অঞ্চলের হোমস্টেগুলিতে। জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখে এক ভ্রমণকারী দলের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দার্জিলিংয়ের সুখিয়াপোখরি থানার অন্তর্গত সোনাদা সংলগ্ন এক হোমস্টেতে ওঠেন তিনি। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে তখনও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তাঁর। কিন্তু গত শনিবার রাতের পর থেকেই সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
হিমাদ্রির বন্ধু সৌর্যদীপ্ত সেনগুপ্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, ৪ অক্টোবর রাত প্রায় দুইটা নাগাদ হিমাদ্রি ফোন করেছিলেন হোমস্টে মালিককে। জানান, তিনি বিপদে পড়েছেন। কথাবার্তা অনুযায়ী, তখন টেন্টে ছিলেন তিনি। এরপর থেকেই তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ। পরদিন, অর্থাৎ রবিবার সুখিয়াপোখরি থানা থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানানো হয় প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল নেমে আসে, ফলে হিমাদ্রির টেন্ট ভেসে যেতে পারে। এরপর থেকেই তাঁর আর কোনও খোঁজ মেলেনি।
হিমাদ্রির বাবা প্রশান্ত পুরকাইত ও মা শুক্লা পুরকাইত আশায় প্রহর গুনছেন। তাঁরা বলেন, শনিবার রাতেও ছেলের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল। রোজ ফোনে কথা হত। সেদিন রাত ১০টায় নাকি জানিয়েছিলেন, খুব বৃষ্টি হচ্ছে। হয়তো বিদ্যুৎ থাকবে না। তারপর থেকে আর কোনও ফোন পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং ও আশপাশের এলাকায় টানা বৃষ্টি ও ধসে একাধিক জায়গায় রাস্তা বন্ধ, নদী উপচে পড়ছে পাহাড়ি ঢল বেয়ে। এই অবস্থায় হিমাদ্রির কোনো সন্ধান না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন পরিবার। স্থানীয় সূত্রের খবর, হিমাদ্রি যে এলাকায় ছিলেন, সেখানে শনিবার গভীর রাতে আকস্মিকভাবে জলস্তর বাড়তে শুরু করে। আশেপাশের টেন্ট ও ক্যাম্পগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।