প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অন্তিম যাত্রার সম্প্রচার টিভির পর্দায় দেখে চোখের জলে ভাসল মুর্শিদাবাদ জেলার জাঙ্গিপুর। এই কেন্দ্র থেকেই ২০০৪ সালে লোক সভা নির্বাচনে প্রথম জিতেছিলেন প্রণববাবু।
সত্তরের দশক থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তার আগে কখনও সাধারণ নির্বাচনে জয়ের স্বাদ পাননি প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। এই প্রসঙ্গে একবার সাক্ষাৎকারে তিনি আক্ষেপও প্রকাশ করে হালকা চালে বলেছিলেন, ‘হয়ত মানুষ আমাকে পছন্দকরেন না।’
সেই দুঃখ দূর হয়েছিল ২০০৪ সালে লোক সভা নির্বাচনে জয়লাভের পরে। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরে কৃতজ্ঞ প্রণববাবু জাঙ্গিপুরবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন প্রথম বার তাঁকে কোনও কেন্দ্রের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য। ২০০৯ সালের নির্বাচনেও তাঁকেই নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন জাঙ্গিপুরের ভোটাররা।
২০০৪ ও ২০০৯, দুই দফার নির্বাচনেই প্রণববাবুর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস বিধায়ক অধুনা মুর্শিদাবাদ জেলার তৃণমূল নেতা মহম্মদ সোহরাব। স্মৃতি রোমন্থনে তিনি বলেন, ‘রাজ্য সভা নির্বাচনে প্রণববাবুকে ভোট দিয়েছি। লোক সভা নির্বাচন এমনকি রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনেও তাঁকে ভোট দিয়েছি। ৫০ বছর ধরে তাঁকে চিনি। ওঁর অভাব আজীবন উপলব্ধি করব।’
পুরনো দিনের কথায় ফিরে গিয়ে সোহরাব বলেন, ‘২০০৪ সালে প্রণববাবুর জয় ছিল অসাধ্য সাধন। জাঙ্গিপুর বামেদের শক্ত ঘাঁটি। আগের দুই নির্বাচনেও সেখানে বাম প্রার্থীই জয়ী হয়েচিলেন। তুলনায় ২০০৯ সালে সহজেই জিতেছিলেন প্রণববাবু।
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শ্রম দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী জাকির হোসেনেরও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের লোক সভা নির্বাচনে জয়লাভের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালে লোক সভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে প্রণবদার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়। তিনি বলেছিলেন, জাকির নির্বাচনে জিততে তোমার সাহায্য দরকার। আমি তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলাম আর শেষ পর্যন্ত কথাও রাখতে পেরেছিলাম।’
তিনিও বলেন, ‘২০০৪ সালের চেয়ে ২০০৯ সালের নির্বাচনে জেতা অনেক সহজ হয়েছিল, তার মূল কারণ ছিল নিজের কেন্দ্র-সহ মুর্শিদাবাদের জন্য প্রণবদার কাজের পরিমাণ। ওঁর সুবাদেই রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রবেশের সুযোগ হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা কখনও ভুলব না।’
ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে ২০১২ সালে ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে জাঙ্গিপুর লোক সভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে বেছে দেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। পর পর দুটি লোক সভা নির্বাচনে জেতার পরে ২০১৯ সালে তিনি তৃণমূল প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।