বাবা-মা'র অজুহাত দিয়েছিল। কিন্তু ‘মাফ’ করল না নিম্ন আদালত। জয়নগর ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় দোষী মোস্তাকিন সর্দারকে ফাঁসির সাজা দিলেন বারুইপুরের ফাস্ট অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জাজেস কোর্টের বিচারক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। অর্থাৎ মাত্র ৬২ দিনের মাথায় জয়নগর ধর্ষণ এবং খুনের মামলার রায়দান করা হল। সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, সমাজে এরকম লোকেদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। বিরল থেকে বিরলতম অপরাধ এটা।। তিনটি ধারায় পকসো আইনের ছয় নম্বর ধারা, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৬ নম্বর ধারা ও ৬৬ ধারা) ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। অপহরণের জন্য যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করেছে নিম্ন আদালত। প্রমাণ লোপাটের জন্য সাত বছর সাজা ঘোষণা করা হয়েছে।
'আমরা জাস্টিস দিতে পেরেছি, এটাই প্রাপ্তি', বলল পুলিশ
সেই রায় ঘোষণার পরে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, 'এই রায় নজিরবিহীন। নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় ঘটনার মাত্র ৬২ দিনের মধ্যে অভিযুক্তের ফাঁসির আদেশ এর আগে পশ্চিমবঙ্গে কখনও ঘটেনি। এই মামলার তদন্তে আমাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, যত দ্রুত সম্ভব নির্যাতিতা এবং তার পরিবারকে ন্যায়বিচার দেওয়া। মেয়েটি আর ফিরবে না, কিন্ত অভূতপূর্ব দ্রুততায় যে তাকে এবং তার পরিবারকে আমরা 'জাস্টিস' দিতে পেরেছি, দীর্ঘদিন বিচারহীন থাকতে হয়নি, এটুকুই আমাদের সান্ত্বনা, আমাদের প্রাপ্তি।'
জয়নগর ধর্ষণ মামলার ইতিবৃত্ত
৪ অক্টোবর: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের মামলার মধ্যে যখন পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল, সেইসময় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে নয় বছরের বালিকাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল।
অভিযোগ ওঠে, নাবালিকা যখন গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে পড়ে বাড়িতে ফিরছিল, তখন তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল মোস্তাকিন। সাইকেলে করে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। ধর্ষণের পরে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিল। রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল মোস্তাকিনকে।
৫ অক্টোবর: পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছিল এলাকা। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল পুলিশের ফাঁড়ি। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল পুলিশের গাড়িতে। পুলিশের সঙ্গে জনতার খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে গিয়েছিল। অভিযোগ ওঠে যে প্রাথমিকভাবে রাতে যখন নাবালিকা নিখোঁজ বলে পুলিশের কাছে যাওয়া হয়েছিল, তখন তৎপরতা দেখানো হয়নি। পুলিশ তৎপরতা দেখালে নাবালিকার প্রাণরক্ষা হতে পারত।
৭ অক্টোবর: স্পেশাল তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে রাজ্য সরকার। প্রাথমিকভাবে খুনের মামলা রুজু করেছিল। পরে কলকাতা হাইকোর্টে নির্দেশে যুক্ত করা হয়েছিল পকসো ধারা। পকসো ধারা যুক্ত না করায় পুলিশকে তুমুল ভর্ৎসনা করেছিল হাইকোর্ট।
৩০ অক্টোবর: বারুইপুরে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছিল। ফাস্ট্র ট্র্যাক আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়।
৫ নভেম্বর: সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। মোট ৩৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।
৫ ডিসেম্বর: চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীর ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় মোস্তাকিন সর্দারকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক।
৬ ডিসেম্বর: রায়দান করেছে আদালত। মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।