মুখে রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে কড়া সমালোচনা করলেও বিজেপি’র অবস্থান এবার কিছুটা হলেও ধাক্কা খেল। কারণ এবার বিজেপির প্রথমসারির নেতার পরিবার এই পরিষেবা নিতে দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে হাজির হলেন। আর করিয়ে নিলেন স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের এই ক্যাম্প কিন্তু সেই পরিবারের উপর মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। এখানেই সৌজন্যের পরিচয় দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প রূপায়ণ করা হচ্ছে না বলে দিলীপ ঘোষ থেকে শুভেন্দু অধিকারীরা নিয়মিত তুলোধনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। সংঘাতের এই আবহেই ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপি’র সভাপতি সুখময় শতপথীর বাবা, মা এবং বোন শনিবার ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে গিয়ে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড করলেন। সুখময়ের জেঠু ও জেঠিমাও স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নিয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, গত ৫ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম পুর এলাকার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন সুখময়ের পরিবারের সদস্যরা। শনিবার ওই ওয়ার্ডের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাসে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডের ছবি তোলার দিন ছিল। উপভোক্তাদের কার্ডও দেওয়া হচ্ছিল। ছবি তুলতেই শিবিরে যান সুখময়ের বৃদ্ধ বাবা ৮৯ বছরের অবনীবান্ধব শতপথী, বৃদ্ধা মা ৭৫ বছরের স্নেহলতা শতপথী, বোন অর্চনা শতপথী। সুখময়ের জেঠু ৯১ বছরের অবলাবান্ধব শতপথী, জেঠিমা ৭৮ বছরের বনলতাও গিয়েছিলেন। তাঁরা ভরসা রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের উপর।
জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপি’র দলীয় কার্যালয়ের কাছেই সুখময়ের পৈতৃক বাড়ি। সেখানে বাবা–মা–বোন ও জেঠু–জেঠিমা থাকেন। সুখময় লাগোয়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। সুখময় নিজে, তাঁর স্ত্রী মোনালিসা ও মেয়ে প্রত্যাশারও নাম ছিল ছবি তোলার তালিকায়। তাঁরা অবশ্য যাননি। সুখময়ের বোনের অবশ্য দাবি, ‘কার্ডে সত্যিই পরিষেবা পাওয়া যাবে কি না দেখার জন্যই কার্ড নিয়েছি।’ সুখময়েরও দাবি, ‘রাজ্য সরকার সবার জন্য নিখরচায় স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়ার দাবি করছে। এই দাবির সারবত্তা যাচাই করতেই আমার পরিবারের সদস্যরা শিবিরে গিয়ে কার্ড নিয়েছেন।’
তবে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘সুখময়বাবু নিজেও কার্ড নিলে ভালো করতেন। ওঁর পরিবারের সদস্যরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নে আস্থাশীল।’ পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম মিলিয়ে সবকটি আসনেই বিধানসভায় হারাবেন বলে দাবি করেছিলেন অধুনা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে এই ঘটনা তাঁকেও অস্বস্তিতে ফেলে দিল বলে মনে করা হচ্ছে।