মেদিনীপুর মেডিক্যালে এক প্রসূতির মৃত্যু এবং আরও পাঁচ প্রসূতির অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনায় সরব হয়ে এবার বিস্ফোরক অভিযোগ আনল রাজ্য়ের চিকিৎসকদের সংগঠন 'জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস'।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি, ২০২৫) একটি প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে চিকিৎসকদের এই সংগঠনটি মেদিনীপুর মেডিক্য়ালের ঘটনাকে 'প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এবং সহনাগরিকদের হত্য়া' বলে অবিহিত করেছে!
সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কার্যত রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রশাসনকেই দায়ী করেছে চিকিৎসকদের এই সংগঠন।
তাদের তরফে জানানো হয়েছে, 'একটি বিশেষ কোম্পানির বিশেষ ব্য়াচের রিংগার্স লেক্টেট' (স্য়ালাইন ওয়াটার) ব্যবহার করার ফলেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। যেখানে এক মাকে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরই নিজের জীবন হারাতে হয়েছে এবং আর পাঁচ প্রসূতিকে কার্যত মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছিল, বিষাক্ত স্য়ালাইন ব্যবহার করার ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসকদের সংগঠনের পক্ষ থেকেও কার্যত একই কথা বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গত একবছর ধরেই এই নির্দিষ্ট সংস্থার তৈরি পণ্য নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালের সুপার থেকে শুরু করে বিএমওএইচ এই সংক্রান্ত অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। অথচ, তারপরও 'স্বাস্থ্য দফতর/ প্রশাসন নির্বিকার প্রশ্রয় দিয়েছে'!
চিকিৎসকদের তরফে আরও দাবি করা হয়েছে, লাগাতার অভিযোগ আসায় মাঝে কিছু দিন ওই সংস্থার স্য়ালাইন সরবরাহ বন্ধ রাখা হলেও কোনও 'অজানা কারণে আবার সরবরাহ চালু করা হয়। যার পরিণতিতে কাল (৯ জানুয়ারি, ২০২৫) ছ'জন মায়ের অসুস্থতা এবং একজন মায়ের মৃত্যু' হয়!
একইসঙ্গে, চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, যদি কোনও রোগীর অ্যালার্জির সমস্যা থাকে, তাহলে এই ধরনের প্রতিক্রিয়ার চিকিৎসা করার জন্য সাধারণ যে ইনজেকশন লাগে, সেটাও হাসপাতালে মজুত থাকছে না। রোগীর আত্মীয়কে তা বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। এর ফলেও চিকিৎসায় অযথা দেরি হচ্ছে।
আর জি কর কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে চিকিৎসকদের আরও অভিযোগ, শুধুমাত্র উত্তর কলকাতার ওই হাসপাতালেই নয়, রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে ও সরকারি হাসপাতালেই নিম্নমানের ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহের চক্র ছড়িয়ে পড়েছে। মেদিনীপুরের ঘটনাই তার প্রমাণ বলে দাবি চিকিৎসক সংগঠনের।
একইসঙ্গে এই ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং আক্রান্ত ও তাঁদের পরিবারের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান-সহ মোট ছ'দফা দাবিও জানিয়েছে রাজ্যের এই চিকিৎসক সংগঠন।