কিডনি পাচার চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলায়। উত্তরবঙ্গে বিষয়টি ধরা পড়লেও এই কাজ গোপনে চলছে গোটা রাজ্যে বলে মনে করছেন অনেকেই। রায়গঞ্জ থানার অন্তর্গত বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের জালিপাড়া এখন সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে। কারণ এখানের গৃহবধূ মাইজলি বর্মনের অভিযোগ, কয়েক মাস আগে বিন্দোলের জালিপাড়ার বাসিন্দা রবি তাঁকে কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ২০ লক্ষ টাকার চুক্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর একটি কিডনি কেটে নেয়। এভাবে এমন কাজ করার নিয়ম নেই বলে চিকিৎসকদের সূত্রে খবর। সেখানে একটা বেসরকারি হাসপাতাল এমন কাজ করল কেমন করে? উঠছে প্রশ্ন।
কিডনি বিক্রির কারণ ঠিক কী? পরিযায়ী শ্রমিক কার্তিক বর্মন। সুতরাং সংসারে অভাব অনটন নিত্যসঙ্গী। তার উপর সংসারে বড় চাপ এসেছিল। সেটা মোকাবিলা করতেই এমন কাজ করতে হয়। যার সুযোগ নিয়েছিল রবি। এই বিষয়ে কার্তিকের স্ত্রী মাইজলি বর্মন বলেন, ‘মেয়ের বিয়ে দিতে হয়েছিল। তাই মহাজনের কাছে প্রচুর টাকা ঋণ হয়ে গিয়েছিল। সেই ঋণের টাকা শোধ করতে পারছিলাম না। তবে চেষ্টা করছিলাম। এই কথা জেনে যায় জালিপাড়ার রবি জালি। তারপর আমাকে প্রস্তাব দেয়, আমার একটি কিডনি বিক্রি করে দিলে নগদ ১৫ লক্ষ টাকা হাতে পাব। তাই ভাবলাম, ওই টাকা দিয়ে মহাজনের ঋণ শোধ করেও অনেকটা টাকা বাঁচবে। যা দিয়ে আমার সংসার ভালভাবে চলে যাবে।’
আরও পড়ুন: নাগাড়ে বৃষ্টির জেরে সিকিমে নামল ব্যাপক ধস, ধসে গেল একত্রে আটটি বাড়ি, মৃত ৩
তারপর ঠিক কী ঘটল? গৃহবধূ মাইজলির অভিযোগ, চুক্তি অনুযায়ী ২০ লক্ষ টাকার মধ্যে দালালি বাবদ ৫ লক্ষ টাকা নেয় রবি। বাকি ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৫ লক্ষ দিয়ে বাকি টাকা দিচ্ছে না রবি। এমনকী বকেয়া চাইলে মাইজলিকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযুক্ত রবি জালি এখন পলাতক। রবির ভাই ছবি জালি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। ১২ বছর আগে এই গ্রামে কিডনি পাচার চক্র ছিল। কিন্তু এখন বন্ধ হয়েছে। আমার স্ত্রী পঞ্চায়েত সদস্য। চক্রান্ত করে আমার দাদাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।’ রায়গঞ্জের মহকুমাশাসক কিংশুক মাইতির বক্তব্য, ‘বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের কাছে জানতে পারলাম। আমি ওই ভদ্রমহিলাকে পরামর্শ দেবো, তিনি যেন থানায় বা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে গিয়ে যথাযথ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।’
আর কী জানা যাচ্ছে? কিডনি পাচার চক্রে জড়িয়ে আগে অনেকেই ধরা পড়েছেন। এই কিডনি পাচার চক্রের জাল অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। নব্বইয়ের দশকে প্রথম কিডনি পাচারের খবরে উঠে আসে রায়গঞ্জ ব্লকের বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের জালিপাড়ার নাম। এখানের মহম্মদ রেজ্জাক নামে এক ব্যক্তি প্রথম এই কাজ শুরু করে বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বাইরে নিয়ে গিয়ে কিডনি কেটে নিত বলেও অভিযোগ আছে। মাঝে সব চুপচাপই ছিল। এবার আবার বিষয়টি সামনে এসেছে। আরও কতজনের সঙ্গে এমন ঘটেছে তা প্রকাশ্যে আসলেই বোঝা যাবে কতটা সক্রিয় আছে এই চক্র।