কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের B-1 কোচের যাত্রী তপন বিশ্বাস। আগরতলায় মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। স্ত্রী কমলা বিশ্বাসকে নিয়ে চেপেছিলেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে। আর পথেই দুর্ঘটনা। সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে জানালেন নদিয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা তপন কুমার বিশ্বাস।
‘১৬ জুন সকালে আগরতলা থেকে ট্রেনে চেপেছিলাম। ট্রেনটা ভালোই চলছিল। কিন্তু সকাল ৯টার একটু আগে মুখ ধুতে বেসিনের কাছে গিয়েছিলাম। সেই সময় আচমকাই ঝাঁকুনি। কিছু বুঝে ওঠার আগে ছিটকে পড়লাম ট্রেনের মেঝেতে। কোনওরকমে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। সেই সময় কাছেই ছিল ট্রেনের সুইপার। তাকে বললাম দেখতো মনে হয় কিছু হয়েছে। চারপাশে আর্তনাদ। ট্রেনটা দাঁড়িয়ে পড়েছে। সারা শরীরে চোট। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। কোনওরকমে স্ত্রীর কাছে গেলাম। সবাই বলছে তাড়াতাড়ি নেমে আসুন। বিরাট অ্য়াক্সিডেন্ট হয়েছে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। প্রথমে ব্যাগ ছাড়াই নেমে আসছিলাম। পরে ব্যাগ নিয়ে তাড়াহুড়ো করে নেমে আসি। সারা শরীরে ব্যাথা। কোমরে প্রচন্ড চোট লেগেছে। স্ত্রীকে নামালাম ট্রেন থেকে। এরপর নেমে দেখি ভয়াবহ ঘটনা। ’
তিনি বলেন, 'বাইরে বেরিয়ে যা দেখলাম তা কোনওদিন ভুলব না। সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। বুঝলাম মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছি। কোথায় যাব বুঝতে পারছিলাম না। দেখলাম আমরা যে কামরায় ছিলাম সেটার কাছেই উলট গিয়েছে অন্য কামরা। আর একটু হলেই…'
ওই যাত্রী বলেন, 'এরপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় গাড়িতে এলাম শিলিগুড়ি বাস টার্মিনাসে। কিন্তু সেখানে বাসের ভাড়া বলছে দু হাজার টাকা। কিন্তু অত টাকা তো আমাদের কাছে নেই। এরপর ফের গেলাম এনজেপি স্টেশনে। সেখানে গিয়ে স্টেশন মাস্টারকে সব খুলে বললাম। তিনি তিস্তা তোর্সাতে সিট ব্যবস্থা করে দিলেন। সেটাতে কোনওরকমে চেপে এলাম। '
ওই যাত্রী বলেন, ‘মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছি।ট্রেনে চাপতেই ভয় লাগছে। এরপর কীভাবে ট্রেনে চাপব বুঝতে পারছি না। এই ভয় সহজে কাটবে না।’
তিস্তা তোর্সার অতিরিক্ত কামরায় জায়গা পেয়েছেন তিনি। সেটাতেই চেপে বসেছেন। ফোনের ওপারেও বোঝা যাচ্ছিল আতঙ্কে তাঁর গলা কেঁপে উঠছে। বললেন, 'জানেন মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এলাম। ৫৬ বছর বয়স। যে দুর্ভোগের মুখে পড়লাম তা কোনোদিন ভুলব না। এরপর মেয়ের বাড়ি যেতে হলে বিমানে ।যাব..আর ট্রেনে নয়…'