দু’পয়সার প্রেস! রবিবার গয়েশপুরে করিমপুর ২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মিসম্মেলনে মেজাজ হারিয়ে সংবাদমাধ্যমকে এভাবেই আক্রমণ করলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সম্প্রতি নদিয়া জেলা তৃণমূলের সভানেত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে প্রতি মাসে জেলার বিভিন্ন বুথের কর্মীদের নিয়ে সম্মেলন করেন তিনি। এদিনও এমন একটি সম্মেলনে দলীয় কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন মহুয়া মৈত্র। আর সেখানেই আপত্তিকর ভাষায় সংবাদমাধ্যমকে কটূক্তি করলেন তিনি।
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের প্রতি মহুয়া মৈত্রের এই ‘অসম্মান’কে হাতিয়ার করে টুইটারে প্রতিবাদ জানিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি–র টুইটার হ্যান্ডেল থেকে এদিন একটি ভিডিও পোস্ট করে তাতে লেখা হয়েছে, ‘তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের এই আক্রমণাত্মক শব্দচয়ন গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের প্রতি তাঁর সম্মানকে তুলে ধরেছে।’ বিজেপি–র কটাক্ষ, ‘নির্বাচনের ভয়ে ভীত কোনও জনপ্রিয়তা–হারানো দলের নেতারা এভাবেই স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে।’
টুইটের সঙ্গে থাকা ওই ভিডিওটি গয়েশপুরের সুকান্ত সদনের। আর তাতে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘কে এই দু’পয়সার প্রেসকে ভেতরে ডাকে? সরাও প্রেসকে এখান থেকে। কেন দলের মিটিংয়ে প্রেস ডাকো তোমরা? কর্মি বৈঠক হচ্ছে আর সবাই টিভি–তে মুখ দেখাতে ব্যস্ত। আমি দলের সভানেত্রী আমি আপনাদের নির্দেশ দিচ্ছি প্রেসকে সরান।’
আর একটি ভিডিও–তে দেখা যাচ্ছে যে সভামঞ্চে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি সভানেত্রীর বার্তা, ‘আপনারা মোবাইল সরিয়ে রাখবেন। এটা ভিডিও রেকর্ডিং বা ছবি তোলার ব্যাপার নয়।’ সে সময়ই সংবাদমাধ্যমেক এক প্রতিনিধিকে ভিডিও রেকর্ড করতে দেখা গেলে মহুয়া মৈত্র তাঁকে রীতিমতো জেরা করেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘এখানে প্রেসের ঢোকার কোনও অনুমতিই নেই। আপনাকে এখানে ঢুকতে কে দিল?’
এদিন সভা শেষে দু’পয়সার সাংবাদিক বলা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘আমি তো আপনাদের রেকর্ড করতে বলিনি। আপনারা এখন সেটা রেকর্ড করেছেন তাই বলতে হয়েছে।’ সাংবাদিকদের পক্ষে জানানো হয় যে যা ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে সবটাই বাইরে থেকে। সভার ভেতরে কোনও রেকর্ডিংই করা হয়নি। এ ব্যাপারে মহুয়া মৈত্রর প্রতিক্রিয়া, ‘ছেড়ে দাও ভাই।’
সাংবাদিকদের অভিযোগ, এদিন সভাস্থলের বাইরে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণও করে তৃণমূলের লোকজন। সে ব্যাপারে মহুয়া মৈত্রকে জানানো হলে তাঁর সাফাই, ‘আমি দেখিনি। আমার উপস্থিতিতে কিছুই হয়নি। আমি আপনাদের ওপর কোনও আক্রমণ করিনি। দলের মিটিংয়ে প্রাক্তন সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তকে আমন্ত্রণ না করার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে নদিয়া জেলার বর্তমান সভানেত্রী মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘সে ব্যাপারে দলের নেতৃত্বরা বলতে পারবেন। আমার কিছু বলার নেই।’
এদিকে, এদিনই সভা শুরুর আগে দলীয় কর্মীদের একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়েন সভানেত্রী মহুয়া মৈত্র। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গয়েশপুরে যিনি তৃণমূলের নতুন সভাপতি, সেই সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় স্থানীয় বাসিন্দা নন। তিনি কল্যাণীর বাসিন্দা। তাই একজন ‘বহিরাগত’কে সভাপতি পদে কেন বসানো হল, তা নিয়ে এদিন প্রশ্ন তুলে মহুয়া মৈত্রকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা। যদিও এদিন বৈঠক খুব ভাল হয়েছে বলে দাবি করেছেন মহুয়া মৈত্র।