কৃষ্ণনগর থেকে কুম্ভমেলা। বাসে কিংবা ট্রেনে পাড়ি দিতেও দুবার হলেও ভাবেন অনেকে। তবে কৃষ্ণনগরের ৭৮ বছর বয়সি দুলাল দাস একেবারে অন্য ধাতুতে গড়া। তিনি একেবারে ভ্যান নিয়ে কুম্ভের দিকে রওনা দিলেন। তবে একলা নন। সেই ভ্য়ানে সওয়ারি তাঁর স্ত্রী। পূণ্য যখন হবে সেটা দুজনে মিলেই হবে! তবে ৭৮ বছর বয়সি এই যুবকের মূল লক্ষ্য কিন্তু পূণ্য অর্জন নয়। এক্ষেত্রে তাঁর একমাত্র লক্ষ্য হল নদী বাঁচানোর ডাক। পরিবেশ বাঁচানোর ডাক। নদী বাঁচাও, পরিবেশ বাঁচাও, জল সংরক্ষণ করো। এমনই সব ডাক দিচ্ছেন তিনি।
আসল নাম দুলাল বিশ্বাস হলেও তিনি সর্বত্র বাঁকাচাঁদ নামেই পরিচিত। পেশায় দর্জি। সাইকেল চালানোর নেশা দীর্ঘদিনের। প্রতি রবিবার বন্ধুদের নিয়ে এখনও সাইকেলে চেপে পরিবেশ বাঁচানোর ডাক দেন তিনি। সাইকেল তো পরিবেশ বান্ধবই। সেই সাইকেলে চেপেই ঘুরে বেড়ান তিনি।
তবে এবারই প্রথম বার এতদূরে ভ্য়ান নিয়ে যাচ্ছেন এমনটা নয়। এর আগে একবার তিনি ভ্য়ান নিয়ে কামাক্ষ্যা চলে গিয়েছিলেন। বন্ধুদের উৎসাহে সেবার তিনি গিয়েছিলেন কামাখ্য়া। এবার একেবারে কুম্ভে। সঙ্গে করে স্ত্রীকেও নিয়ে যাচ্ছেন।
রবিবার বিকালে কৃষ্ণনগর থেকে রওনা দিয়েছেন তিনি। এরপর একটানা ভ্যান চালাচ্ছেন। মাঝে একটু বিশ্রাম। ফের ভ্য়ান চালাবেন তিনি। কম টাকায় বহু দূর পাড়ি। সঙ্গী স্ত্রী। আর অদম্য মনের জোর। দুলাল বিশ্বাসের আরও একটা নাম আছে। সেটা হল বাঁকাচাঁদ। এলাকার লোকজন, বন্ধুবান্ধবরা আদর করে এই নামে ডাকেন। চিরদিনের সঙ্গী সাইকেল। আর সেই সাইকেল ভ্য়ানে চেপেই তিনি রওনা দিলেন কুম্ভের দিকে। ভ্যান রিকশার মাথায় ছাউনি দেওয়া আছে। সেই ছাউনির ভেতরে তিনি স্ত্রীকে রেখেছেন। নদী বাঁচাও, জল বাঁচাও। ডাক দিয়েছেন বাঁকাচাঁদ। বাংলা থেকে কুম্ভের দিকে যাচ্ছেন তিনি।
পথে পড়বে অনেক নদী। অনেক জনপদ। সেখানেই বাঁকাচাঁদের ডাক নদী বাঁচাও, জল বাঁচাও। অচিনপুরের পথিক দুলাল বিশ্বাস।
আসলে সাইকেল, ভ্য়ানে যাওয়ার অনেকটাই লাভ রয়েছে। একদিকে বেশ আপন মনে স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করতে করতে ভ্যান টেনে যাওয়া যায় অনেকটা পথ। আবার এতে পরিবেশ দূষণের কোনও ব্যাপার থাকে না। একেবারে পরিবেশ বান্ধব যান। খরচও অনেকটা কম। যাওয়ার পথে ভ্য়ানের ছাউনির মধ্য়েই একটু জিরিয়ে নেওয়া যাবে। এরপর ফের পথ চলা।