একাধিক বাম ছাত্র–যুব সংগঠনের নবান্ন অভিযানকে ঘিরে বৃহস্পতিবার ধুন্ধুমার কাণ্ড বাঁধে এস এন ব্যানার্জি রোড। নবান্ন অভিযানে ধুন্ধুমার কাণ্ড এবং পুলিশের ভূমিকার প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার রাজ্যজুড়ে ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছে বামেরা। সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই বন্ধকে সমর্থন করেছে কংগ্রেস ও আব্বাস সিদ্দিকীর দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত বন্ধের মিশ্র প্রভাব দেখা গিয়েছে। শিয়ালদহ দক্ষিণ, মেইন ও কর্ড লাইনে রেল পরিষেবা ব্যাহত হলেও রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হাওড়া স্টেশনে।
যাদবপুর, ধর্মতলা, রাসবিহারী–সহ কলকাতার আশপাশে বন্ধের প্রভাব তেমন চোখে না পড়লেও জেলায় কমবেশি প্রভাব ফেলেছে বামেদের ১২ ঘণ্টার এই বন্ধ। এদিন সকাল ৮টা নাগাদ বারাসতের চাঁপাডালি মোড়ে বন্ধকে ঘিরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাস্তা অবরোধ ঘিরে সমস্যার সূত্রপাত। অভিযোগ, জোর করে সরকারি বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেন বন্ধ সমর্থনকারীরা। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী আসে। এদিন বারাসতের অধিকাংশ দোকানপাট খোলেনি। বারাসত শহরে কিছুটা হলেও বন্ধের প্রভাব পড়েছে। মিছিল করে খোলা দোকানপাট বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন বাম–কংগ্রেস কর্মী–সমর্থকরা। দিঘা–বারাসত রুটে হেলমেট পরে বাস চালাতে দেখা যায় চালকদের।
কলকাতা শহরের আশপাশে বন্ধের মিশ্র প্রভাব চোখে পড়েছে। এদিন সকাল থেকে ধর্মতলার মোড়ে সামান্য কম ব্যস্ততা চোখে পড়ে। যানবাহনও কম দেখা যায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হচ্ছে। হাজরা মোড়, রাসবিহারীতে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। যাদবপুর এইটবি থেকে মিছিল করে সিপিএম। এদিকে, উল্টোডাঙায় বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় বসে পড়েন বন্ধ সমর্থনকারীরা। চলে ফুটবল খেলাও। লেকটাউনে কালিন্দি–যশোহর রোড অবরোধ করে বামেরা। পরে পুলিশ এসে সেই অবরোধ হটিয়ে দেয়।
এদিকে, শিয়ালদহ শাখার বিভিন্ন স্টেশনে বন্ধের জেরে থমকে গিয়েছে ট্রেন চলাচল। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ডায়মন্ড হারবারে রেললাইনে ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলে বন্ধ সমর্থনকারীরা। এদিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে দেউলা ও সংগ্রামপুর স্টেশনের মাঝে। বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়ে একাধিক ট্রেন। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার হোটরেও চলে বন্ধ সমর্থনকারীদের অবরোধ। শিয়ালদহ–বনগাঁ শাখার বামনগাছি, গুমা, বিড়া স্টেশন ও অশোকনগরে তিন নম্বর গেটে দফায় দফায় চলে অবরোধ। কাঁচরাপাড়ায় রেল অবরোধের জেরে আটকে পড়েছে একাধিক ট্রেন।
হাওড়া ট্রেন চলাচল আপাতত স্বাভাবিক থাকলেও ডোমজুড়ে ট্রেনলাইনে গাছের গুড়ি ফেলার খবর পাওয়া গিয়েছে। জানা গিয়েছে, এর জেরে আটকে পড়েছে ডাউন হাওড়া–আমতা লোকাল। তবে স্বাভাবিক রয়েছে হাওড়া স্টেশন, রয়েছে পর্যাপ্ত ট্যাক্সি। হাওড়া ব্রিজ ও হাওড়া বাসস্ট্যান্ডেও যানবাহন চলাচল, মানুষের ব্যস্ততা স্বাভাবিক রয়েছে। হাওড়ায় শহরের দিকে না পড়লে গ্রামাঞ্চলে পড়েছে বন্ধের প্রভাব। ডোমজুড় থানার সামনে হাওড়া–আমতা রোড অবরোধ করে ফুটবল খেলেন বাম কর্মী–সমর্থকরা। হাওড়া ময়দান চত্বরে চলে অবরোধ। সালকিয়া থেকে বড় মিছিল বেরিয়েছে।
এদিকে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অনেকেই রাস্তায় নেমে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বহরমপুরে রাস্তায় নামেনি বেসরকারি বাস। তবে সরকারি বাস চলাচল করছে। ক্যানিং হাসপাতাল মোড়ে ক্যারম খেলেন বন্ধ সমর্থকরা। আর তার জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ক্যানিং–বারুইপুর রোড। ক্যানিংয়ে বাম–কংগ্রেসের মিছিলে উঠল ‘খেলা হবে’ স্লোগান। তবে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে কারখানা খোলা। সকাল থেকে খোলা প্রায় সমস্ত জুটমিল। হাজিরাও স্বাভাবিক। উত্তরপাড়ায় জিটি রোডের ওপর ফুটবল খেললেন বন্ধ সমর্থকরা। পুলিশকে চকোলেটও দিয়েছেন তাঁরা।
অন্যদিকে, মেদিনীপুরে ঘাটাল–পাঁশকুড়া রাজ্য সড়ক ও খড়গপুর–কেশিয়াড়ি রাস্তা অবরোধ করেন বন্ধ সমর্থনকারীরা। রামপুরহাটে বিক্ষোভ দেখায় বাম–কংগ্রেস। রামপুরহাটে বেসরকারি বাস পরিষেবা বন্ধ। সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডেও বন্ধ বেসরকারি বাস। তবে বীরভূম জুড়ে সরকারি বাস পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে। উত্তরবঙ্গের মধ্যে কোচবিহারে বন্ধকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। কোচবিহারের কেশব রোডে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ দেখান বামেরা। এদিন সকাল থেকে কোচবিহারে বেসরকারি বাস বন্ধ। কোচবিহারে শহরে জোর করে বাস আটকানোর অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের কর্মী–সমর্থকদের বিরুদ্ধে। পাল্টা দলীয় পতাকা নিয়ে রাস্তায় নামে তৃণমূল কর্মী–সমর্থকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। পাশাপাশি সকাল ৯টা পর্যন্ত বন্ধের প্রভাবমুক্ত মালদা। টোটো, অটো, রিক্সা–সহ সরকারি বাস চলছে রাস্তায়।
উল্লেখ্য, বামেদের বন্ধ রুখতে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। আজ সব সরকারি কর্মীকে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। জানানো হয়েছে, বন্ধের দিন কোনওরকম ছুটি নেওয়া যাবে না। আজ অফিস না এলে বেতন কাটার নির্দেশিকাও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্ধের কথা মাথায় রেখে যাবতীয় পুলিশি ব্যবস্থাও করেছে সরকার। কলকাতা শহরে মোতায়েন রয়েছে সাড়ে ৩ হাজার পুলিশ। জোর করে দোকানপাট বন্ধ, গাড়ি আটকালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বৃহস্পতিবারই জানান জয়েন্ট সিপি (হেড কোয়ার্টার)।
গতকাল নবান্ন অভিযানকে ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাঁধে ধর্মতলা চত্বরে। বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করতেই লাঠিচার্জ করতে শুরু করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করে পুলিশ। পাল্টা পুলিশের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা তাঁদের লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করেছে। জানা গিয়েছে, প্রায় ৩২ জন বাম কর্মী–সমর্থক আহত হয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনেকের মাথাও ফেটেছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের আঘাত গুরুতর। এই পুলিশি ‘হামলা’র প্রতিবাদেই এদিন ১২ ঘণ্টা বন্ধ, হরতালের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট।