‘খাও খাও বুঁদ হয়ে ডুবে যাও, দেখ চোখে চোখে সরষেফুল। করুক মাথা ঝিমঝিম।’ এই গানের লাইনটি এখন আক্ষরিক অর্থে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল বাংলায়। কারণ এবার রেকর্ড মদ বিক্রি হয়েছে বাংলায়। শীত পড়তেই দেদার তুফান উড়েছে মদের গ্লাসে। তার মধ্যে বিষ্ণুপুর মেলা উপলক্ষ্যে চারদিন পেরনোর মধ্যেই প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার মদ বিক্রি হয়েছে! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। ২০২৩ সালে ৬ কোটি টাকা মদ বিক্রির রেকর্ডও ভেঙে গিয়েছে ২০২৪ সালে। ডিসেম্বর মাসে এখনও পর্যন্ত ৭ কোটি টাকারও বেশি মদ বিক্রি হয়েছে বলে আবগারি দফতর জানিয়েছে। প্রত্যেকদিন গড়ে যে পরিমাণ মদ বিক্রি হয়েছে তাতেই আগের রেকর্ড ভেঙে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। মেলা ও পর্যটনের মরশুমে বেচাকেনা দ্বিগুণ হয়েছে।
ডিসেম্বর মাসে সব থেকে বেশি মদ বিক্রি হয়েছে। সুরাপ্রেমীরা দেদার মদ কিনেছেন। তার জেরেই অতীতের রেকর্ডকে ভেঙে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে পর্যটকরা এখন আসছেন মল্লভূমের টেরাকোটা মন্দির এবং মল্ল রাজাদের নানা স্থাপত্য দেখতে। তাই বিষ্ণুপুর টুরিস্ট লজ থেকে হোটেলগুলিতে জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। ৩৭ তম বিষ্ণুপুর পর্যটন, সাংস্কৃতিক এবং হস্তশিল্প উৎসব শুরু হয়েছে। তার সঙ্গে জুড়েছে ‘জেলা সবলা মেলা’ এবং ‘সৃষ্টিশ্রী’ মেলা। মেলায় পর্যটকরা এসে ভিড় জমাচ্ছেন পানশালাগুলিতেও। আবগারি দফতরের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২০২৩ সালের তুলনায় অনেক বেশি দেশি–বিদেশি মদ বিক্রি হয়েছে।
আরও পড়ুন: এবার মন্ত্রীদের উদ্দেশে ফরমান জারি হল নবান্ন থেকে, কড়া নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
সারা বছরই কম–বেশি মদ বিক্রি হয় কলকাতা থেকে জেলায়। সেটাই একলাফে বেড়ে যায় ডিসেম্বর মাসে। একদিকে বড়দিন অপরদিকে বর্ষবরণ দেদার মদ বিক্রি হয় বাংলায়। তার সঙ্গে কোনও মেলা, উৎসব থাকলে মদের বিক্রি বেড়ে যায়। বিষ্ণুপুর শহর এলাকায় মোট আটটি মদের দোকান আছে। সব দোকান মিলিয়ে বিষ্ণুপুর মেলার চারদিনের মাথায় প্রায় ৬ শতাংশ বেশি মদ বিক্রি হয়েছে। টাকার অঙ্কে ধরলে ৭০ লক্ষ টাকার মদ বিক্রি হয়েছে চারদিনে। যার ষাট শতাংশ অর্থ রাজ্য সরকারের কোষাগরে ঢুকেছে। পরিসংখ্যান বলছে, বিষ্ণুপুর মেলার চারদিনে প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা রাজস্ব ঢুকেছে রাজ্য সরকারি কোষাগারে।
এখানের ব্যবসায়ীরা জানান, মেলা উপলক্ষ্যে রোজ যে পরিমাণ মদের বিক্রি হয়, তার চেয়েও এবার কয়েক গুণ বেশি মদ বিক্রি হয়েছে। বিষ্ণুপুর মেলা ছাড়াও ডিসেম্বর মাসে বড়দিনের পিকনিকে দেদার মদ বিক্রি হয়েছে। কোনও ব্যবসায়ী এক লক্ষ তো কোনও দোকানদার ৪ লক্ষ টাকারও বেশি মদ বিক্রি করেছেন বড়দিনে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আবগারি দফতরের অফিসার বলেন, ‘কলকাতা–সহ সারা রাজ্যেই দেদার মদ বিক্রি হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। প্রত্যেক বছরই শীতকালে মদের বিক্রি বাড়ে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসজুড়ে জেলায় ৬ কোটি টাকার বেশি মদ বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে সাত কোটি টাকারও বেশি মদ বিক্রি হয়েছে। তার জন্য রাজ্য সরকারের রাজস্ব আদায় অনেকটা বেড়েছে।’