রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একসঙ্গেই ঘোষণা করা হয়েছিল যে তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর হবে এবং দেউচা পাঁচামিতে কয়লা খনি হবে। দেউচা পাঁচামিতে খনির কাজ শুরু হয়ে গেল। অথচ, তাজপুরে আর বন্দর হল না!
আক্ষেপের এই সুর শোনা যাচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরের বাসিন্দাদের গলায়। কারণ, ২০১৯ সালে দিঘায় আয়োজিত হওয়া শিল্প সম্মেলন থেকে তাজপুর বন্দরের শিলান্যাস করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর প্রায় ছ'বছর কাটতে চললেও তাজপুর বন্দরের কোনও কাজই শুরু হয়নি।
সদ্য এবারের রাজ্য বাজেট পেশ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে লেখালিখিও শুরু হয়েছে। সেইসব প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের হতাশা আর ক্ষোভের কথা।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, এবারের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হোক, কিংবা রাজ্য বাজেট - কোথাওই তাজপুর বন্দর নিয়ে কোনও কথা বলা হয়নি। অথচ, দেউচা পাঁচামি নিয়ে রাজ্য সরকারের উৎসাহ চূড়ান্ত। বিষয়টি তাজপুরের বাসিন্দাদেরও নজর এড়ায়নি। আর তাতেই প্রমাদ গুনছেন তাঁরা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আদৌ তাজপুরে কোনও দিন বন্দর হবে তো? যেখানে বাজেট পেশের দিন - অর্থাৎ - গত বুধবার মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, 'তাজপুরের দরপত্র নতুন করে হবে মনে হয়, কিছু ত্রুটি থাকায়।'
প্রসঙ্গত, তাজপুরে বন্দর তৈরির বরাত পেয়েছিল আদানি গোষ্ঠী। বিনিয়োগ হওয়ার কথা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। আদানি গোষ্ঠীকে এই সংক্রান্ত আগ্রহপত্রও দেওয়া হয়েছিল। যার পর শঙ্করপুরে একটি 'সাইট অফিস' খুলে সেখানে পাঁচ জন 'গ্রিন গার্ড' (নিরাপত্তারক্ষী) নিয়োগ করা হয়। যাঁরা আদতে 'দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ' (ডিএসডিএ)-এর চুক্তিভিত্তিক কর্মী।
বর্তমানে শঙ্করপুরের সেই সাইট অফিস তালাবন্ধ! তাজপুর প্রায় জনশূন্য! আর সংশ্লিষ্ট পাঁচজন গ্রিন গার্ড কাজ করছেন মন্দারমণিতে।
রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে, তাজপুর বন্দরের কাজ শুরু করার জন্য আদানি গোষ্ঠীকে দেওয়া আগ্রহপত্র ও একটি চিঠি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে পাঠানো হয়। এর জবাবে জাহাজ মন্ত্রক তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করে। যা মানতে নারাজ রাজ্য সরকার।
এই প্রেক্ষাপটে অন্য একটি সংস্থাকে বন্দর নির্মাণের বরাত দেওয়ার কথা ভাবা হলেও বেশ কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে বলে দাবি সূত্রের। যা আগে মিটিয়ে নেওয়া দরকার। প্রসঙ্গত, প্রথমেই তাজপুরে বন্দর তৈরির জন্য আদানি গোষ্ঠী ছাড়াও ওই অন্য সংস্থাটিও দরপত্র দিয়েছিল।
এদিকে,সম্প্রতি শোনা যায়, তাজপুরের বদলে মন্দারমণিতে গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে তুলতে চায় আদানি গোষ্ঠী। একইসঙ্গে, তাজপুর নিয়ে নতুন করে 'গ্লোবাল টেন্ডার' ডাকা হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সম্ভাবনাও ক্রমশ আরও গভীরে চলে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।