বাংলার জঙ্গলমহলে আবারও ফিরল বাঘের আতঙ্ক। অনুমান করা হচ্ছে, সম্প্রতি ওডিশা থেকে ঝাড়খণ্ড হয়ে এ রাজ্যে ঢুকে পড়া বাঘিনি জিনতের টানেই একটি পুরুষ বাঘ ফের একবার বাংলার সীমানায় ঢুকে পড়েছে। যদিও বন দফতরের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, শুক্রবার সক্কাল-সক্কাল বাঘের আনাগোনার সঙ্কেত পাওয়া যায় পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের পাটকিটা ও রাইকা পাহাড়তলি এলাকায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই দিন সকালে সেখানে নাকি বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছে। এর বেশ কিছুক্ষণ পর, শুক্রবার দুপুরে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি এলাকায় কেটকি ঝরনার জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দর্শন পাওয়া যায় বলে দাবি করেছেন স্থানীয় মানুষজন।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক মহিলার চোখের সামনেই ছাগলের পালের উপর হামলা চালায় একটি বাঘ! স্থানীয় সূত্রের দাবি, অন্য়ান্য দিনের মতোই শুক্রবারও কেটকি ঝরনার জঙ্গলে ছাগলের পাল চড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন এলাকারই এক মহিলা। সেই সময়েই নাকি হামলার ঘটনাটি ঘটে।
ওই মহিলার দাবি, তিনি এই ঘটনায় অত্যন্ত ভয় পেয়ে যান এবং বাকি ছাগলগুলি নিয়ে কোনও মতে জঙ্গল থেকে গ্রামে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে, একটি ছাগলের দেহাবশেষ উদ্ধার হয় বলেও জানা গিয়েছে।
কিন্তু, এই ঘটনাগুলি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পুরুলিয়া বা ঝাড়গ্রাম - দুই জেলাতেই বন দফতরের তরফ থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে, বেলপাহাড়ির বিডিও সমন ঘোষকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে যে - বিডিও 'শুনেছেন' একটি ছাগলের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে বন দফতরের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
এদিকে, বাঘ দেখতে পাওয়ার দাবি সামনে আসার পরই শুক্রবার বিকেলে ঝাড়গ্রামের কেটকি ঝরনার জঙ্গলে যান বন দফতরের কর্মী ও আধিকারিকরা। সেখানে তাঁরা বেশ কয়েকটি ট্র্যাপ ক্যামেরা লাগান। যদিও আগে থেকেই ওই এলাকায় বেশ কিছু ট্র্যাপ ক্যামেরা লাগানো ছিল।
একইভাবে, পুরুলিয়ার বান্দোয়ানেও নতুন করে আরও কিছু ট্র্যাপ ক্যামেরা লাগানো হয়েছে বন দফতরের পক্ষ থেকে। কর্তৃপক্ষের আশা, যদি এলাকায় নতুন করে কোনও বাঘ ঢোকে, তাহলে নিশ্চয় তার উপস্থিতি এই ট্র্যাপ ক্যামেরায়ে বন্দি হবে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যে পুরুষ বাঘটি নিয়ে নতুন করে তাদের মাথাব্যথা শুরু হয়েছে, সেটি এসেছে পালামৌয়ের জঙ্গল থেকে। এর আগে বেলপাহাড়ির ভুলাভেদা এবং বাঁশপাহাড়ি রেঞ্জে বেশ কয়েকবার তার পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু, এই এলাকায় সে কখনও কোনও গবাদি পশুর উপর হামলা চালিয়েছে, এমন অভিযোগ কেউ করেননি।
কিন্তু, শুক্রবার ঝাড়গ্রামে অনভিপ্রেত সেই ঘটনাই ঘটেছে বলে দাবি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই দাবি সত্যি হলে জঙ্গল লাগোয়া বসত এলাকার বাসিন্দাদের বিপদ বাড়বে। তাই বন দফতর সতর্ক রয়েছে।
তাদের ধারণা, এই পুরুষ বাঘটি খুব সম্ভবত ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূমের কুকরু হয়ে বান্দোয়ানে ঢোকে। এটাই তার সম্ভাব্য করিডর।