শ্রেয়সী পাল :
কেন্দ্রের দাবির সঙ্গে বাস্তবের ফারাকটা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে উঠল। নয়াদিল্লির দাবি মতো ‘শ্রমিক স্পেশ্যাল’ ট্রেনের যাত্রীদের ৮৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া তো দূর অস্ত, কেরালার এর্নাকুলাম থেকে বহরমপুরে ফিরতে শ্রমিকদের ৯১০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হল।
বুধবার রাতে 'শ্রমিক স্পেশ্যাল' ট্রেনে এনার্কুলাম থেকে বহরমপুরে ফেরেন ১,২২৪ জন পরিযায়ী শ্রমিক। মঙ্গলবার এনার্কুলাম থেকে ট্রেন ছাড়ার পর বুধবার বিকেলে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে ট্রেন লেট থাকায় রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ট্রেনটি বহরমপুরে পৌঁছায়।
সেই ট্রেনে ছিলেন জলঙ্গির ধনীরামপুর গ্রামের হাবিবুর শেখ। যিনি তিরুবন্তপুরমের একটি সড়ক প্রকল্পে কাজ করতেন। তিনি বলেন, 'আমরা সাত মাস আগে কেরালায় গিয়েছিলাম। অধীর চৌধুরীর (বহরমপুরের সাংসদ) উদ্যোগের কারণে আমরা ফিরতে পারলাম। কেরালা পুলিশ খুব সাহায্য করেছে। আমাদের খাবার দিয়েছে।' তবে ট্রেনের টিকিটের পুরো টাকা তাঁকেই দিতে হয়েছে বলে জানান হাবিবুর। তিনি বলেন, ‘ট্রেনের যাত্রা বিনামূল্যে ছিল না। আমায় ৯১০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হয়েছে।’
অথচ বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের মুখে কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়েছে, ‘শ্রমিক স্পেশ্যাল’ ট্রেনের যাত্রীদের ভাড়া দিতে হবে না। কারণ যাত্রীদের টিকিটে ৮৫ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে কেন্দ্র। বাকি ১৫ শতাংশ বহন করছে রাজ্য। ফলে কেন্দ্রের দাবি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নচিহ্ন উঠছে। তবে শুধু কেরালা থেকে ছাড়া ট্রেনে নয়, বিজেপি-শাসিত গুজরাত থেকে ছাড়া ট্রেনের যাত্রীরাও একই অভিযোগ করেছেন।
এদিকে, মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস জানিয়েছেন, প্রত্যেক যাত্রীর স্ক্রিনিং হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে তাঁদের হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের ১৪ দিন বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তাঁদের ঠিকানা নেওয়া হয়েছে। যাতে স্বাস্থ্যকর্মীরা সেদিকে নজর রাখতে পারেন। নমুনা পরীক্ষার জন্য তাঁদের লালারস নেওয়া হয়নি।’
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার শরবী রাজকুমার জানিয়েছেন, অধিকাংশ শ্রমিক মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। কয়েকজনের বাড়ি নদিয়া-সহ অন্যান্য জেলায়। তিনি বলেন, ‘তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা ৬৫ টি বাস এনেছি। তাঁদের খাবার ও জল দেওয়া হয়েছে।’
এরইমধ্যে শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর কৃতিত্ব কার, তা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। তৃণমূল জেলা সভাপতি মোশারাফ হোসেন বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপ্যাধ্যায় এই মানুষদের ফিরিয়ে এনেছেন। অন্য রাজ্যে আটকে পড়া মানুষরা পশ্চিমবঙ্গের টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাইতে পারেন।’
যদিও বহরমপুরের সাংসদের অভিযোগ, শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি মমতার সরকার। তিনি বলেন, ‘রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমায় বলা হয়েছে যে শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্য সরকার মাত্র দুটি ট্রেনের কথা বলেছে। মন্ত্রক আরও ট্রেন চালানোর জন্য তৈরি। কিন্তু রাজ্য তাদের সঙ্গে কথা বলেনি।’
যদিও সেই রাজনৈতিক তরজার মধ্যেই শ্রমিকদের একটাই চিন্তা, এবার কীভাবে সংসার চলবে। সইদ আলি নামে এক শ্রমিকের কথায় সেই দুশ্চিন্তার আঁচ পাওয়া গেল। তিনি বলেন, ‘রাজ্যে কোনও কাজ না থাকায় আমরা কেরালায় গিয়েছিলাম। আমি জানি না, এখন কী করব। তবে আমি খুশি যে পরিবারের সঙ্গে দেখা হবে।’