জমি নিয়ে বাবা আর কাকার মধ্যেই দীর্ঘদিনের শরিকি বিবাদ। আর সেই বিবাদেরই খেসারত প্রাণ দিয়ে চোকাতে হল ১৬ বছরের কিশোরকে। এবার ওই কিশোর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছিল। কিন্তু, শনিবার অঙ্ক পরীক্ষায় আর বসা হল না তার! ওই দিনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হল সুকান্ত দেবনাথের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দেবনাথ পরিবার আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের চাপরেরপার-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের চালনিরপাক এলাকার বাসিন্দা। একটি শরিকি জমি নিয়ে সুকান্তর বাবার সঙ্গে সুকান্তর কাকার পরিবারের বহু বছর ধরে বিবাদ চলছে তো চলছেই।
শুক্রবার রাতে সেই বিবাদ চরমে ওঠে। সূত্রের দাবি, দুই ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরাই একে অপরকে বাঁশ দিয়ে মারধর করেন। এই মারপিটের মাঝে পড়ে যায় ১৬ বছরের সুকান্তও। তার মাথায় বাঁশের আঘাত লাগে। রক্তাক্ত সুকান্ত তাতেই অচেতন হয়ে যায়। অন্যদিকে, সুকান্তর কাকা ও কাকিমাও আহত ও রক্তাক্ত হন।
এরপর এই তিনজনকেই আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সুকান্তর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, তার পক্ষে কোনওভাবেই পরীক্ষায় বসা সম্ভব নয়। উপরন্তু, তাকে কোচবিহারের হাসপাতালে রেফার করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই ঘটনার খবর সুকান্তর স্কুলেও পৌঁছয়। পদ্মেশ্বরী হাইস্কুলের ছাত্র ছিল সে। স্কুলের পক্ষ থেকে শনিবার সকালে মধ্যশিক্ষা পর্যদকে গোটা ঘটনা জানানো হয়। তারপরও পর্ষদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়, যদি হাসপাতালেই সুকান্তর পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। সেই মতো পর্ষদের প্রতিনিধিরাও (এমার্জেন্সি রেসপন্স টিম বা ইআরটি) আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে পৌঁছে যান। কিন্তু, তখনও তাঁদের পরীক্ষার্থীর জ্ঞান ফেরেনি। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, তার বাঁচার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
শেষমেশ চিকিৎসকদের আশঙ্কাই সত্যি হয়। আরও ভালো চিকিৎসার জন্য সুকান্তকে কোচবিহারে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। বাঁচানো যায়নি ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা।
এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা হতবাক ও ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য, জমি নিয়ে এমন বিবাদ মানা যায় না, যার জন্য পরিবারের সন্তানকে পরিবারের লোকেদের হাতেই কার্যত খুন হতে হয়।
সংবাদমাধ্যমের সামনে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য নির্মল টুডুও। তিনি জানান, এই শরিকি বিবাদ বহু দিনের। তাঁর আগের জনপ্রতিনিধিরা চেষ্টা করেও সেই বিবাদ মেটাতে পারেননি। একইভাবে তিনিও এই বিষয়ে নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে তাঁর আক্ষেপ, এর খেসারত এক নাবালককে নিজের প্রাণ দিয়ে চোকাতে হল।
জেলা মাধ্যমিক পরীক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সৌভিক দে সরকার জানিয়েছেন, এই ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কিন্তু, পরীক্ষা দিতে আসার সময় বা পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে এই ঘটনা ঘটেনি, পরীক্ষার হলেও কিছু হয়নি। তাই, তাঁদের এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করার কোনও এক্তিয়ার নেই।
পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী জানিয়েছেন, আলিপুরদুয়ার থানার পক্ষ থেকে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করে অবশ্যই আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।