প্রকাশ্য রাস্তা থেকে অপহরণ করা হয়েছিল ভিনরাজ্যের বাসিন্দা মা ও দুই মেয়েকে। তাঁদের বন্দি করে টানা ১১ দিন ধরে চলত অত্যাচার। যৌন ও শারীরিক নির্যাতন চালানোর এমনই অভিযোগ উঠল জমি মাফিয়ার বিরুদ্ধে। কোনওরকমে মুক্তিপণ দিয়ে রেহাই মেলে ওই গৃহবধূ ও তাঁর দুই মেয়ের।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের মোথাবাড়ি থানা এলাকায়। এখানেই শেষ নয়, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, নির্যাতিতারা থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে, তা দায়ের করতে অস্বীকার করে তাঁদের অন্য থানায় যেতে বলা হয়। অবশেষে মঙ্গলবার এক আইনজীবীর সাহায্যে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন নির্যাতিতা ওই বধূ।
ওই গৃহবধূর আইনজীবী জানিয়েছেন, মালদহ জেলা আদালত অভিযোগ গ্রহণ করেছে। ইংরেজবাজার থানাকে ঘটনার এফআইআর দায়ের করে তদন্তের রিপোর্ট আদালতে জমা করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
এদিকে এই ঘটনার পর থেকেই গা-ঢাকা দিয়েছে অভিযুক্ত ও তার দলবল। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও গোটা ঘটনা নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মহারাষ্ট্রের থানে এলাকার বাসিন্দা ওই নির্যাতিতা জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী থানেতে ঠিকাদারির কাজ করতেন। পরিবার নিয়ে তাঁরা সেখানেই থাকেন।
স্বামীর পৈতৃক ভিটে রয়েছে মালদহের মোথাবাড়ি এলাকায়। তাঁর স্বামী ছেলের ভবিষ্যতের জন্য ১ কাঠা জমি কিনেছিলেন। কিন্তু জমিটি রেজিস্ট্রি করার আগেই গত বছর জুনে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। ফলে, তখনকার মতো তাঁর নামে জমিটি স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি। তাঁদের পরিবারের আর্থিক প্রয়োজনে সেই সময় মোথাবাড়ির বাসিন্দার ওই অভিযুক্তের কাছ থেকে চার লক্ষ টাকা ঋণ নেন ওই বধূ। কিন্তু অভিযুক্ত ওই মহিলার কাছে তার পাওনা টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।
বধূ জানিয়েছেন, মোথাবাড়ি এলাকায় থাকা তাঁদের ওই ১ কাঠা জমি ওই অভিযুক্তকে বিক্রি করে টাকা শোধ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু জমিটি রেজিস্ট্রি না হওয়ার কারণে সেই প্রক্রিয়া মাঝ পথেই আটকে যায়। ওই জমিটি যেহেতু এখনও অন্যের নামে রয়েছে, সেজন্য ওই জমি অভিযুক্তকে বিক্রি করার জন্য আদালতের অনুমতি নিতে মুম্বই থেকে মালদহে আসেন তিনি।
ওই গৃহবধূর অভিযোগ, ১১ মে অভিযুক্ত দলবল নিয়ে তাঁকে ও তাঁর দুই মেয়েকে মালদহ শহরের রথবাড়ি মোড় থেকে অপহরণ করে। তাঁদের মোথাবাড়ি এলাকায় একটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। আরও অভিযোগ, সাড়ে চার লক্ষ টাকা দাবি করে তাঁদের উপর যৌন ও শারীরিক নির্যাতন চালায় অভিযুক্ত। টানা ১১ দিন পর ওই মহিলা তাঁর এক আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনওরকমে কিছু টাকা দিয়ে সেখান থেকে মুক্তি পান। এরপর মোথাবাড়ি থানায় গেলে, সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ তাঁদের জানায় যেহেতু ঘটনাটি মালদহে ঘটেছে, সেজন্য তাঁদের ইংরেজবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করতে হবে। কিন্তু অভিযোগ, ইংরেজবাজার থানাও বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করতে থাকে। এদিকে বাকি টাকার জন্য অভিরাম মণ্ডল ও তার দলবল ওই বধূকে লাগাতার হুমকি দিতে থাকে। বাধ্য হয়ে তিনি মালদহ জেলা আদালতের দ্বারস্থ হন।