মহেশতলার জিনজিরা বাজারে জোড়া খুন কাণ্ডের মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল ডায়মন্ডহারবার জেলা পুলিশ। আর এই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতেই কিনারা হয়ে গেল জোড়া খুন কাণ্ডের। জোড়া খুনে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পুলিশকে বহ কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে বলে খবর। ঠাকুমা ও নাতিকে খুন করেছিল এই অভিযুক্ত। তাকে গ্রেফতার করে দফায় দফায় জেরা করতেই ভেঙে পড়ে অভিযুক্ত। তারপর খুনের কথা স্বীকার করে সে।
পুলিশ কী তথ্য পেয়েছে? পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতের নাম আসাব শেখ ইউসুফ। খুনে অভিযুক্ত আসাব পেশায় রাজমিস্ত্রি। তিন মাস আগে এই বাড়িতে কাজ করেছিল আসাব। তখনই গোটা বিষয়টি রেইকি করে নিয়ে যায়। রাজমিস্ত্রির কাজে সময় লেগে যায় একমাস। আর তার মধ্যে গোটা বাড়িতে কে, কখন থাকে এবং কোথায়, কি আছে তা রেইকি করে নেয় অভিযুক্ত। এই বাড়ির গৃহকর্তা শেখর মণ্ডল দুপুরে থাকতেন না। আর বিকেলে গৃহশিক্ষক পড়াতেন আসতেন। এই বিষয়টি দীর্ঘদিন দেখে চুরি করতে এসেছিল আসাব। কিন্তু বাড়ির সদস্যরা সেটা দেখে ফেলতেই আসাব ঠাকুমা–নাতিকে খুন করে চম্পট দেয় অভিযুক্ত। জেরায় এই কথা স্বীকার করেছে সে।
তারপর ঠিক কী ঘটেছিল? তারিখটা ছিল ১২ মে। ওইদিন গৃহশিক্ষক মহেশতলার এই বাড়িতে পড়াতে আসেন। দরজা খোলা দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তবে তিনি ভিতরে ঢুকে দেখেন ঘরেই পড়ে রয়েছে ঠাকুমা–নাতির রক্তাক্ত দেহ। এই দৃশ্য দেখে তিনি ডাকেন প্রতিবেশীদের। তাঁরা এসে এমন দৃশ্য দেখে পুলিশে খবর দেন। তখন থেকেই তদন্ত শুরু করে পুলিশ। জোড়া খুনের তদন্তে নেমে এলাকার সিসিটিভ ফুটেজ সংগ্রহ করেন তাঁরা। সেখানে দেখা যায়, সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে ছাতা মাথায় দিয়ে এই বাড়িতে ঢুকল। আর কিছুক্ষণ পরে সে বেরিয়ে গেল। সাইকেল নিয়ে এলেও সেটা বাড়ির থেকে একটু দূরে রেখেছিল ওই ব্যক্তি। তখন পরনে ছিল লুঙ্গি। আর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পরনে ছিল হাফ প্যান্ট। এটাই পুলিশকে ভাবিয়ে তোলে।
কেমন করে ধরল পুলিশ? এই সিসিটিভি ফুটেজ বারবার পরীক্ষা করা হয়। বাড়ির সামনে ক্যামেরা আছে জানত বলেই আসাব ছাতা ব্যবহার করে মুখ ঢেকেছিল। কিন্তু বেরিয়ে যাওয়ার সময় একঝলক তার মুখ ধরা পড়ে যায় ক্যামেরায়। আর তাতেই জোড়া খুনের কিনারা সহজ হয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তকে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিষ্ণুপুর থানার বাখরাহাট রোডের রসপুঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন জোড়া খুনে অভিযুক্ত আসাবকে। তারপর মহেশতলা থানায় নিয়ে এসে জেরা করতেই গোটা ঘটনা নিজের মুখে স্বীকার করে পুলিশের কাছে। মায়া মণ্ডল ও হিরণ মণ্ডলকে খুন করেছিল সে। আসাবের বাড়ি মুর্শিদাবাদে হলেও কালীতলা থানা এলাকায় ভাড়া থাকে। বড়লোক পরিবার দেখে মোটা টাকা হাতাতেই এই খুন বলে সে পুলিশকে জানিয়েছে।