কল্যাণীর বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে মূল অভিযুক্ত তথা ওই বেআইনি কারখানার মালিক খোকন বিশ্বাসকে। কিন্তু, তিনি যে এই প্রথম গ্রেফতার হলেন, তা নয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এর আগেও বেআইনি বাজির কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হতে এবং হাজতবাস করতে হয়েছে খোকনকে। কিন্তু, তারপরও বাজির ব্যবসা থেকে সরেননি তিনি!
তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসেও এই খোকন বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, আতশবাবাজির আড়ালে শব্দবাজি তৈরি করছেন তিনি। কিন্তু, সেই দফায় মাত্র সাতদিনের জন্য জেল খাটতে হয়েছিল এই অসাধু ব্যবসায়ীকে। তারপর জামিন পেয়ে যান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ২০২৩ সালে জেল থেকে বের হওয়ার পর আরও বেশি করে বাজি ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন খোকন। বাড়ান ব্যবসার বহর। তা নিয়ে এলাকাবাসীও যে বড় একটা চিন্তিত ছিলেন, তেমনটা নয়। বরং, এলাকার বেশ কিছু মানুষ খোকনের বেআইনি বাজি কারখানায় কাজ করতে পেরে খুশিই ছিলেন। যাঁদের অধিকাংশই মহিলা।
এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বাসিন্দারা জানান, বাজি কারখানায় খাটনি অন্য়ান্য কাজের তুলনায় কম। অথচ, রোজগার বেশি। তাই মূলত বাড়ির মহিলারা সংসার সামলে এই কারখানাগুলিতে কাজ করেন। তাতে পরিবারের খরচ টানতে কিছুটা সুবিধা হয়। আর এই সুবিধা করতে গিয়েই এবারের বিস্ফোরণে প্রাণ হারাতে হয়েছে দুর্গা সাহা, বাসন্তী চৌধুরী, রুমা সোনার এবং অঞ্জলি বিশ্বাসকে। কিন্তু প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বেশি ভাবতে রাজি নয় কাজের খোঁজে থাকা অভাবী মানুষ।
সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের বক্তব্য, বেআইনিভাবে যাঁরা বাজির ব্যবসা করেন, তাঁরা দু'টি বিষয় খুব ভালো বোঝেন। প্রথমত - মানুষের কাজের চাহিদা এবং দ্বিতীয়ত - আইনের ফাঁকফোকর। ফলে বিস্ফোরণ, শ্রমিক মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটলেও গ্রেফতার হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই আইনের ফাঁক গলে জেল থেকে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা।
কিন্তু, বিস্ফোরক আইনে গ্রেফতার হওয়ার পরও ছাড় মেলে কীভাবে? এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় - ঘটনাস্থল থেকে প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক মেলেনি বা যা বিস্ফোরক ছিল, তার সবই পুড়ে গিয়েছে। এমনকী, বেশিরভাগ সময় ধৃতের পুলিশ হেফাজতের বদলে জেল হেফাজত চাওয়া হয়। ফলত, অভিযুক্তদের খুব বেশি দিন হাজতবাস করতে হয় না।
খোকনের ক্ষেত্রেও তেমন ঘটনাই ঘটেছে বলে দাবি সূত্রের। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কড়া অবস্থান দেখিয়েছে নবান্ন। তদন্ত করছে রানাঘাট জেলা পুলিশ। কিন্তু, এরপরও কি এই এলাকায় বেআইনি বাজির কারবার আদৌ পুরোপুরি বন্ধ হবে? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।