জয়নগরের পর ফরাক্কা। আবারও নাবালিকার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দ্রুত বিচার পেল নির্যাতিতার পরিবার। প্রায় দুই মাসের (৬১ দিন) মধ্যেই এই ঘটনায় মূল দুই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে কঠোরতম সাজা শোনাল আদালত।
আজ, শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪) ফরাক্কায় নাবালিকার খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় মূল দোষী ৩৫ বছরের দীনবন্ধু হালদারকে ফাঁসির সাজা শোনায় আদালত। একইসঙ্গে, এই পৈশাচিক অপরাধে দীনবন্ধুর সঙ্গী ২৩ বছরের শুভজিৎ হালদারকেও কঠোর সাজা শোনানো হয়। আদালতের নির্দেশ, তাকে যাবজ্জীবন কারাবাসেই কাটাতে হবে।
উল্লেখ্য, জয়নগরেও নাবালিকার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মাত্র ৬২ দিনের মাথায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা এবং তার বিরুদ্ধে ফাঁসির সাজা ঘোষণার প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছিল। তারপর সমান দ্রুততার সঙ্গে ফরাক্কাতেও দোষীদের শাস্তি হওয়ায় স্বভাবতই খুশি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ প্রশাসন।
এই ঘটনা নিয়ে এদিন রাজ্য পুলিশের তরফে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার। তিনি জানান, মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল বিজয়া দশমীর দিন।
ওই নাবালিকার বাবা ও মা দু'জনেই কর্মসূত্রে রাজ্যের বাইরে থাকেন। তাই, নাবালিকাও তাঁদের সঙ্গে ভিন রাজ্যে থাকত। কিন্তু, পুজো উপলক্ষে সে ফরাক্কায় তার মামাবাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। দশমীর সকালে মেয়েটি অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা করছিল।
সেই সময়েই দীনবন্ধু হালদার তাকে ভুলিয়ে নিজে ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে বাচ্চাটির উপর চরম যৌন অত্য়াচার করা হয় এবং পরে তাকে খুন করে বস্তাবন্দি করে রাখা হয়। এই কুকীর্তিতে দীনবন্ধুকে পূর্ণ সহযোগিতা করে শুভজিৎ। এই দু'জনই এই এলাকার বাসিন্দা এবং তারা দু'জনই মাছ বিক্রেতা।
সুপ্রতিম জানিয়েছেন, মূল দুই অপরাধী এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করলেও, তাতে লাভ হয়নি। তারা যে নাবালিকাকে সঙ্গে নিয়ে ওই ঘরে ঢুকেছিল, সেটা স্থানীয় এক মহিলা দেখে ফেলেন। পরবর্তীতে পুলিশের তদন্তে গোটা ঘটনা পরিষ্কার হয়ে যায়।
অন্যদিকে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, ওই নাবালিকার উপর পৈশাচিক অত্যাচার করা হয়েছিল। মেঝেয় মাথা থেঁতলে খুন করা হয়েছিল মেয়েটিকে। যে কারণে তার গলার হার ভেঙে যায়! এমনকী, মৃত্যুর পরও নাবালিকার মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা হয়!
পুলিশের দাবি, তথ্য-প্রমাণ যথাযথ থাকায় ধৃত দীনবন্ধ ও শুভজিতের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে কোনও সমস্যা হয়নি। পাশাপাশি, আদালতও অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এই মামলার শুনানি করেছে। বৃহস্পতিবারই জঙ্গিপুরের আদালত ধৃতদের দোষী সাব্যস্ত করেছিল এবং শুক্রবার তাদের সাজা ঘোষণা করা হল।
প্রসঙ্গত, এদিনই আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের মামলায় জামিন পেয়েছেন অন্যতম অভিযুক্ত তথা প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। গ্রেফতারের ৯০ দিন পরও সিবিআই এই মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করতে পারেনি। ফলত, আদালত এই মামলায় তাঁদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে।