একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বাংলায় বিজেপি শুধু পরাজয়ের মুখই দেখেছে। এবার সাগরদিঘি উপনির্বাচনে জয়ের মুখ দেখল বাম–কংগ্রেস জোট। অথচ যে বিজেপি বাংলার প্রধান বিরোধী দল তাঁদের প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়ে গেল। সুতরাং সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে যত না বড় ধাক্কা তার থেকেও অনেক বড় ধাক্কা বিজেপির কাছে। কারণ এবারও দেখা গেল তাঁদের ‘জমানত বাজেয়াপ্ত’ হয়েছে। সুকান্ত মজুমদার বঙ্গ–বিজেপির সভাপতি হওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলার সব বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বিজেপির। সাগরদিঘিতেও সেই ধারা অব্যাহত থাকায় অনেকে খোঁচা দিয়ে বলছেন ‘সুকান্ত ট্রাডিশন’।
কেমন হয়েছে সাগরদিঘির ফলাফল? সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের ফলপ্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, জয়ী প্রার্থী বাইরণ বিশ্বাস পেয়েছেন ৪৭.৩৫ শতাংশ ভোট। তৃণমূল পেয়েছে ৩৪.৯৩ শতাংশ ভোট। বিজেপি পেয়েছে ১৩.৯৪ শতাংশ ভোট। সংখ্যার হিসাবে বাইরণের ঝুলিতে গিয়েছে ৮৭৬৬৭টি ভোট। তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছেন ৬৪৬৮১টি ভোট। আর বিজেপি প্রার্থী দিলীপ সাহা পেয়েছেন মাত্র ২৫৮১৫টি ভোট। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই সাগরদিঘি থেকেই বিজেপি প্রার্থী মাফুজা খাতুন পেয়েছিলেন ৫৪ হাজারের বেশি ভোট। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সেই ভোট কমে ৪৫ হাজার হলেও দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেছিল বিজেপি। এখন তৃতীয় তথা শেষ স্থানে।
ঠিক কী বলছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি? এই হার তিনি লুকাতে চাইছেন। তাই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্য বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ বলেন, ‘মুসলিম ভোট তৃণমূল থেকে সরছে। এটা ভাল লক্ষ্মণ। মুসলিমরাও বুঝতে পারছেন তৃণমূল তাদের কোনও উন্নয়ন করতে পারবে না। তাই মানুষ তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সরে এসেছে। আমি তাদের বলব, নাগাল্যান্ডের দিকে দেখুন। যেখানে ৯৮ শতাংশ সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান, তাঁরা কিন্তু মোদীজির ওপর ভরসা রেখেছেন।’
অন্যদিকে এই উপনির্বাচনে কংগ্রেস জেতায় রাজ্যের ‘দ্বিতীয় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি’ হিসেবে এগিয়ে আসতে পারে বামফ্রন্ট–কংগ্রেস জোট। অদূর ভবিষ্যতে না হলেও সুদূর ভবিষ্যতে সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই প্রধান বিরোধী দলের রাজনৈতিক জমি নিয়ে বিজেপির উদ্বেগের কারণ থাকছে। কিন্তু সুকান্ত মজুমদার তা মানতে চাননি। তাঁর সাফাই, ‘আমার মনে হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছিলেন এখান থেকে কংগ্রেস–বাম সমর্থিত প্রার্থী জিতুক। ওখানকার ভোটারদের দাবি ছিল মুসলিম বিধায়ক চাই। সাগরদিঘিতে মুসলিম ভোট তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওখানে কংগ্রেসকে জিতিয়ে বিরোধী ভোট ভাগ করতে চেয়েছেন।’