শুক্রবার দুপুরে মন্ত্রিসভা থেকে শুভেন্দু অধিকারী ইস্তফা দিতেই নিশ্চুপ হয়ে পড়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল। এমনকী ঘরে-বাইরে শুভেন্দুকে নিয়ে মন্তব্যও এড়িয়ে চলছেন তিনি। শুধু শুক্রবার গৌরচন্দ্র বলেন, ‘এটা রাজ্যের বিষয়। এখানে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’ যে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে তাঁর উত্থান, সেই তিনিই এড়িয়ে যাচ্ছেন মন্ত্রিসভা থেকে শুভেন্দুর সরে যাওয়ার প্রসঙ্গ। আসলে শুভেন্দু যেখানে যাবেন তিনিও সেখানে যাবেন বলেই এখন চুপ করে আছেন। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
এখন চুপ করে থাকার পথ ধরেছেন মালদহে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ অধিকাংশ নেতা-নেত্রীই। কারণ শুভেন্দু কাউকেই জানায়নি তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ কী। সুতরাং কোন পথে হাঁটবেন তাঁরা, তা বুঝে উঠতে পারছেন না। তাঁদের মধ্যে অনেকেই দলে থাকাকালীনই শুভেন্দুর ‘অরাজনৈতিক’ সভায় যোগ দিয়ে অনেকেই দলের রোষের মুখে পড়েছেন। পদাধিকারীদের নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেওয়া হয়েছে। তাই ‘দাদা’ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত চুপ করে থাকার পথেই হাঁটছেন শুভেন্দু ঘনিষ্ঠরা।
এদিকে শনিবার কলকাতায় মালদহের জেলা নেতৃত্বদের সঙ্গে বৈঠক বসেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে মৌসম নুর, দুলাল সরকার, মোয়াজ্জেম হোসেন, মানব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অম্লান ভাদুড়িরা হাজির রয়েছেন। তবে ডাক পেয়েছেন গৌর–সহ জেলার দুই প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সাবিত্রী মিত্র এবং কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীও। এই অবস্থায় কলকাতার বৈঠক অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তৃণমূলের জেলা নেতাদের একাংশ। আসলে শুভেন্দু সরে যেতেই মালদহের সংগঠন ভেঙে পড়তে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এই জেলার সংগঠনও শুভেন্দুর হাতেই তৈরি। সামনে বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে জেলার সংগঠন যদি ভেঙে যায় তাহলে তার ফায়দা তুলবে গেরুয়া শিবির। তা যাতে না হয় তাই এই জরুরি ভিত্তিতে ডাকা হয়েছে বৈঠক।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মালদহে ভরাডুবির পরেই তৃণমূলের জেলার পর্যবেক্ষক হন শুভেন্দু। তাঁর নেতৃত্বেই লড়াই করে ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ পুরসভার দখল নেয় তৃণমূল। বিধানসভায় ভরাডুবি হলেও পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল সাফল্য পায় জেলায়। তৃণমূলের একাংশের দাবি, শুভেন্দু জেলার পর্যবেক্ষক থাকার সময় প্রতিটি বিধানসভায় জেলার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সারির নেতাদের পর্যবেক্ষক করে বসিয়েছিলেন। সেই পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন শুভেন্দু। এই পরিস্থিতিতে মৌসম বেনজির নূর বলেন, ‘দলের নজর সবার উপরেই আছে।’ এই মৌসমকেও তৃণমূলে নিয়ে এসে গণি খান গড়ে আঘাত হেনেছিলেন শুভেন্দুই। তাই মালদহ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে তৃণমূল শিবিরের, এমনটাই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
যদিও তৃণমূল শিবিরের দাবি, এটা নেহাতই রুটিন বৈঠক। তাতে অন্য কোনও কারণ নেই।