ছেলেটাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে বাবা। কারণ ছেলেটি যে মানসিক ভারসাম্যহীন। আর এই রোগের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই অসহায় বৃদ্ধ বাবার। তাই ২০ বছর ধরে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন নিজের ছেলেকে। এভাবে ছেলেকে বেঁধে রাখতে বাবার কষ্ট হলেও পরিস্থিতি তাঁকে নিরুপায় করে তুলেছিল। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে অগত্যা ছেলেকে কাটাতে হচ্ছে বন্দিদশা। তবে চেষ্টা করেছিলেন। একাধিক জায়গায় গিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ বাবা। ছেলের চিকিৎসার আর্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ওই বৃদ্ধ বাবার কথা কেউ শোনেনি। রাস্তায় চোখের জল ফেলে বাড়ি ফিরেছেন বারবার। তাই বিকল্প পথ হিসেবে ছেলেকে দিলেন বন্দি জীবন। এমন বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে এই বাংলায়।
মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের মালিওর তিয়রপাড়া এলাকা। এখানের বাসিন্দা শফিকুল আলম (৪০)। তাঁর বাবা বুলমাজন সংবাদমাধ্যমে জানান, ছেলের যখন ১৮ বছর বয়স তখন তার মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাকে বহরমপুর মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু তাতে সুস্থ হয়নি। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় বেসরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। বাবা বুলমাজনবাবুর একটি ছোট পানের দোকান আছে বাড়ির সঙ্গেই যুক্ত। ওখানেই যা বিক্রিবাটা হয় তা দিয়েই চলে সংসার। কোনও জমিও নেই যে বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করাবেন। তাই এই অসহায় বাবা ছেলেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে।
আরও পড়ুন: বীরভূমের বাসিন্দা পরিযায়ী শ্রমিকের গলাকাটা দেহ উদ্ধার, মহারাষ্ট্রে ঠাণেতে কাজ করতেন
পানের দোকানের কাজ সেরে বহুবার নানা চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়েছিলেন বুলমাজনবাবু। সেখানে অনুনয়–বিনয় করে বিশেষ লাভ হয়নি। অনেকে কটাক্ষ করেছে, পাগলের বাবা বলে। রাস্তায় অনেকের কাছে আর্থিক সাহায্যও চেয়েছিলেন। প্রতিবেশীদের কাছেও সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। শহরে আসার কোনও যোগসূত্র ঘটেনি। তাই বাবা হয়ে ছেলের শিকল বন্দি অবস্থা রোজ দেখতে হয়েছে। এই ছেলে বারবার বাড়ি থেকে পালিয়ে যেত। তাই তাকে নিরাপদে রাখার জন্য শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়েছে বলে জানান বাবা। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেও সেটা কোনও কাজে আসেনি। সব হাসপাতালই ফিরিয়ে দিয়েছে।
মানসিক চিকিৎসা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের আওতায় হয় না বলে বুলমাজনবাবুকে অনেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন বলে তাঁর দাবি। এই ঘটনা এবার জানতে পেরেছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেন। তারপরই তিনি উদ্যোগী হন। মন্ত্রী তাজমুল হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিয়ে মানসিক চিকিৎসা হয় না। তবে আগে বহরমপুরে চিকিৎসার ব্যবস্থা আমি করেছি। পরবর্তী সময়তেও আমরা দেখছি। আবার ছেলেটির চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করছি।’