উত্তরবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে হারানো জমি বিধানসভা ভোটে ফিরে পেতে মরিয়া রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির জনসভা থেকে উত্তরবঙ্গের মানু্ষের জন্য একগুচ্ছ কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন তিনি। একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে রাজবংশী ও কামতাপুরী ভাষাভাষি মানুষদের জন্যও। সে ব্যাপারেও এদিন জানিয়েছেন মমতা। একইসঙ্গে নির্বাচনে তৃণমূলকে জেতানোর জন্য আবেদনও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘আমি উত্তরবঙ্গে লোকসভায় একটাও আসন পাইনি। কিন্তু বিধানসভায় আমি আপনাদের আশীর্বাদ, দোয়া— সবটাই চাই।’
এদিন উত্তরবঙ্গবাসীদের জন্য একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক কর্মসূচির কথা ঘোষণ করেন মমতা। প্রথমেই তিনি রাজবংশী ও কামতাপুরী ভাষাকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, ‘রাজবংশী ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল বোর্ড তৈরি করা হয়েছে। এর জন্য ২৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। রাজবংশী আবাস যোজনায় ১১০০ সরকারি বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। রাজবংশী লোকসঙ্গীতের সুমহান ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৫০০ জন রাজবংশী লোকশিল্পীকে দেওয়া হয়েছে সঙ্গীতের সরঞ্জাম। রাজবংশী ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নয়নের স্বার্থে ২০১২ সালে রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমি তৈরি করা হয়েছে। যার হেডকোয়ার্টার কোচবিহারে। এর কাজের জন্য ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে কামতাপুরী ভাষা সাহিত্য অ্যাকাডেমিতেও দেওয়া হয়েছে ৫ কোটি টাকা। ৭০ লক্ষ টাকা দিয়ে আলিপুরদুয়ারে রাজবংশী কালচারাল অ্যাকাডেমি তৈরি করা হয়েছে।’
এর পাশাপাশি চা বাগানের গৃহহীন শ্রমিকদের আবাসনের জন্য ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ৩ বছরের মধ্যে উত্তরবঙ্গের মোট ৩৭০টি চা বাগানের যে সমস্ত শ্রমিকের পাকা বাড়ি নেই তাঁদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। মমতা এদিন বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠন কেএলও–র (কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন) বেশিরভাগ লোকজন মূলস্রোতে ফিরে এসেছে। তাঁদের ৪০০ জনকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হয়েছে, আরও ৬০০ জনকে কিছুদিনের মধ্যে চাকরি দেওয়া হবে।’
এদিনই কোচবিহারে মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ মেডিক্যাল কলেজের নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন মমতা। জনসভায় এ ব্যাপারে আগাম ঘোষণা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কোচবিহারে মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ মেডিক্যাল কলেজের নতুন ক্যাম্পাসের কাজ সম্পূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে। সেটি এদিনই উদ্বোধন করা হবে। এর পরেই মেডিক্যাল কলেজ হবে জলপাইগুড়িতে।’ একইসঙ্গে তিনি জানান, ২৭ একর জমির ওপর পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কোচবিহারে পঞ্চানন বর্মা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস তৈরি করা হচ্ছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে পঞ্চানন নগর। ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার পৈত্রিক ভিটের সংস্কার করে সেখানে পঞ্চানন বর্মা কর্মশালা তৈরি করা হয়েছে। উন্নয়নের জন্য সেখানে ১ কোটি টাকার বেশি অনুদান দেওয়া হয়েছে। নতুন বছর থেকে ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার জন্মদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আরও বলেন, ‘গোর্খা ব্যাটেলিয়ন আর নারায়ণী সেনার দীর্ঘদিনের দাবি রাখা হয়েছে। নারায়ণী সেনার ব্যাটেলিয়ান তৈরি করার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এর হেডকোয়ার্টার হবে মেথলিগঞ্জে। এ ছাড়া গোর্খা ব্যাটেলিয়ান আর জঙ্গলমহল ব্যাটেলিয়ান তৈরি করা হচ্ছে। এই দুটির হেডকোয়ার্টার হবে যথাক্রমে নকশালবাড়ি আর ঝাড়গ্রামে। এর জন্য ৩০১৮টি পোস্টও তৈরি হয়েছে।’