সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি বিরোধী বিক্ষোভে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত’ বলে আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার শিলিগুড়িতে এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নরেন্দ্র মোদীকে সম্মান করি। কিন্তু আজ আমি ওঁকে একটি প্রশ্ন করতে চাই। যদি আমাদের দেশ এতই বড় হয়, তা হলে তাকে পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করতে আপনার লজ্জা হয় না? আপনি কি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হয়ে গিয়েছেন?’
বৃহস্পতিবার কংগ্রেস ও তার শরিকদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে নির্যাতনের বিষয়ে কোনও প্রতিবাদ জানানো হয়নি। সেই বিষয়ে কংগ্রেস মুখে কুলুপ এঁটেছে বলে কটাক্ষ করেন মোদী। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না জানিয়ে বিরোধীরা যেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিবাদ জানানোর আবেদন জানান নমো।
এ দিন তারই পালটা হিসেবে মমতা বলেন, ‘হিন্দুস্তান নিয়ে কথা বলুন। পাকিস্তান নিয়ে কথা বলবেন না। আমরা পাকিস্তান সম্পর্কে শুনতে চাই না। হিন্দুস্তানকে পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করবেন না। প্রতিটি বিবৃতিতে আপনি পাকিস্তানকে টেনে আনেন, যেন আপনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হয়ে গিয়েছেন। দিনের পর দিন আপনি পাকিস্তানের মহিমা প্রচার করছেন। আমরা পাকিস্তানকে সমর্থন করি না। আমরা হিন্দুস্তানকে সমর্থন করি।’
এর পর মমতা বলেন, ‘কী হচ্ছে এখানে? কেউ যদি বেকারত্ব রয়েছে বলে চাকরি চায়, তাকে পাকিস্তানে যেতে বলা হয়। কেউ যদি খাদ্য চায়, তাকে পাকিস্তানে যেতে বলা হয়। কেউ যদি বলে কোনও শিল্প নেই, তাকে পাকিস্তানে যেতে বলা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে উনি সব সময় পাকিস্তান নিয়ে কথা বলেন।’
সম্প্রতি বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ দফতরের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র এক মন্তব্য কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়। নেট দুনিয়ার এক সদস্যের অভিযোগের জবাবে বাবুল বলেন, ‘আপনাদের প্রথমে আপনাদের দেশে ফেরত পাঠাব আর তার পরে পোস্টকার্ডে উত্তর পাঠাব।’
কিছু দিন আগে মীরাটের এক আইপিএস আধিকারিককে সিএএ বিরোধীদের পাকিস্তানে যাওয়ার নির্দেশ দিতে দেখা গিয়েছে। সেই ভিডিয়ো ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়ার পরে নতুন বিতর্কের সূচনা হয়।
গোড়া থেকেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি-এর প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
এদিকে সিএএ ও এনআরসি বিরোধী বিক্ষোভের মাঝেই কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে আগামী ১০ জানুয়ারি একদিনের কলকাতা সফরে আসছেন নরেন্দ্র মোদী। গত লোকসভা নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয়বার কেন্দ্রের মসনদে বসার পরে এই প্রথম বাংলায় আসছেন নমো। তৃণমূল সূত্রে খবর, সফরের মাঝে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর একটি বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রভাব বৈঠকে পড়বে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা।মোদী।