ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধীদের ধরাশায়ী করতে 'বীরভূমের বাঘ' কেষ্টকে, কৃষ্ণের (জীবনকৃষ্ণ সাহা) এলাকার দায়িত্ব তুলে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা দেখে ও শুনে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ বলছেন, অনুব্রত (মণ্ডল) যতই তিহাড় ফেরত হোক না কেন, তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার উপর এখনও ১০০ শতাংশ ভরসা রয়েছে তৃণমূল নেত্রীর।
কেন বলা হচ্ছে একথা? কারণ, ছব্বিশের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের বড়ঞা বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে বীরভূম তৃণমূল কংগ্রেসের জেলাসভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকেই দিয়েছেন মমতা। তাঁর এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে গভীর রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশ আছে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
প্রথমত, ২০২১ সালে প্রথমবারের জন্য বড়ঞা বিধানসভাকেন্দ্রে জয়লাভ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু, সেই আসন ছিল তফসিলি সংরক্ষিত। সূত্রের দাবি, সেই সময় তৃণমূলের নির্বাচন কৌশলীর দায়িত্বে থাকা সংস্থা আইপ্যাক নাকি ওই কেন্দ্রের জন্য কোনও যুৎসই প্রার্থী ঠিক করে উঠতে পারছিল না!
তখনই আসরে নামেন বীরভূমের কেষ্ট। এবং তিনি তাঁর 'ঘনিষ্ঠ' জীবনকৃষ্ণের নাম প্রস্তাব করেন। কারণ, কৃষ্ণকে কেষ্ট আগে থেকেই চিনতেন। আসলে মুর্শিদাবাদের বড়ঞার ছেলে জীবনকৃষ্ণ ২০১২ সাল থেকেই বীরভূমের নানুর বিধানসভা এলাকার দেবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে কর্মরত। অনুব্রতর সেই প্রস্তাব মঞ্জুর হয়। সেবার জীবনকৃষ্ণ বড়ঞার প্রার্থী হন এবং প্রথমবারের জন্য ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের হয়ে জয় ছিনিয়ে আনেন।
কিন্তু, সেই ঘটনার পর মাঝের কয়েক বছরে অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে। গরুপাচার মামলায় কেষ্ট যেমন গ্রেফতার হয়ে তিহাড়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। অন্যদিকে, নিয়োগ দুর্নীতির জেরে জীবনকৃষ্ণকেও গ্রেফতার হতে ও হাজতবাস করতে হয়েছে। যদিও শেষমেশ তিনিও জামিন পেয়েছেন এবং নিজের এলাকায় ফিরে বিধায়কের কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছেন।
কিন্তু, যে ১৩ মাস জীবনকৃষ্ণ জেলে ছিলেন, সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কে বিজেপি কিছুটা হলেও থাবা বসিয়েছে বলে দাবি সূত্রের। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে।
উপরন্তু, আগামী নির্বাচনের সময় প্রচারে জীবনকৃষ্ণের জেলে যাওয়াকে যে বিরোধীরা হাতিয়ার করবে, সেটাও ভালো মতো বোঝেন মমতা। তাই, সেখানে এমন কোনও নেতা দরকার, যিনি যেকোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সংগঠনকে দৃঢ় ও সঙ্গবদ্ধ রাখতে পারবেন এবং বিরোধীদের যেকোনও রাজনৈতিক আক্রমণের পালটা ও তীব্র জবাব দিতে পারবেন।
উপরন্তু, যেহেতু কৃষ্ণ এবং কেষ্ট পূর্ব পরিচিত ও একে-অপরের 'ঘনিষ্ঠ', তাই একজনের এলাকায় অন্যজন সংগঠন সামলানোর দায়িত্ব নিলেও সমন্বয়ের অভাব হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সবকিছু বিবেচনা করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য কেষ্টর হাতে কৃষ্ণের ঘর সামলানোর দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বড়ঞার দায়িত্ব পাওয়ার পরই জীবনকৃষ্ণের সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলেছেন অনুব্রত। আর জীবনকৃষ্ণের বক্তব্য় হল, 'কেষ্টদা'র মতো দক্ষ নেতা বড়ঞার দায়িত্বে আসায় দলেরই লাভ হবে। সংগঠনের কাজ করতেও সুবিধা হবে।