বাংলা নিউজ > বাংলার মুখ > অন্যান্য জেলা > ‘লোকের কাছে যেন ভুলভাল না যায়’, মমতার মন্তব্যের পর ২ বার পরিবর্তন লকডাউনের তারিখ

‘লোকের কাছে যেন ভুলভাল না যায়’, মমতার মন্তব্যের পর ২ বার পরিবর্তন লকডাউনের তারিখ

নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ছবি সৌজন্য পিটিআই)

সম্পূর্ণ লকডাউনের দিন নির্ধারণে মঙ্গলবার যেভাবে হাবুডুবু খেল রাজ্য সরকার, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে।

শুরু হয়েছিল ১০ দিন দিয়ে। ভরা সাংবাদিক বৈঠকে তা পালটে হল ন'দিন। রাতে আবার তা কমে দাঁড়াল সাতদিন। সম্পূর্ণ লকডাউনের দিন নির্ধারণে মঙ্গলবার যেভাবে হাবুডুবু খেল রাজ্য সরকার, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে।

আরও পড়ুন : করোনার সময় নাগাড়ে রোগী সেবা, হাসপাতালে ভরতি ফুয়াদ হালিম

নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে জানান, আগামী অগস্টে রাজ্যে ১০ দিন সম্পূর্ণ লকডাউন হবে। আগামী ২ এবং ৩ অগস্ট লকডাউন থাকবে। কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন, ৩ তারিখ রাখি পূর্ণিমা। সেজন্য ঠিক হয়, ২ ও ৫ তারিখ সার্বিক লকডাউন হবে। বাকি যে দিনগুলিতে লকডাউন ঘোষণা করেন, সেগুলি হল  - ৮, ৯, ১৬, ১৭, ২২, ২৩, ২৯ এবং ৩০ তারিখ। যদিও তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় প্রশাসনিক কর্তাদের উপর ‘রেগে’ যান মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও বলেন, ‘লোকের কাছে যেন ভুলভাল না যায়, আমি কিন্তু অনেকবার করে বললাম।’

আরও পড়ুন : করোনা জুজু, উপসর্গ থাকা ধৃতদের জন্য ‘আইসোলেশন লকআপ’-এর পরিকল্পনা কলকাতা পুলিশের

সেই মন্তব্যের পর মুখ্যমন্ত্রী জানান, তারিখ নিয়ে কিছুটা ‘কনফিউশন’ হয়েছে। তাই নতুন করে ‘ফাইনাল’ তারিখ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আরও দু'তিনটে প্রোগ্রাম আমাদের নলেজে এল এক্ষুণি। কারণ ক্যালেন্ডারে তো সবগুলি লেখা থাকে না। নতুন ডেট আপনাদের দিচ্ছি। ওর মধ্যে দু'তিনটে উৎসব পড়ে গিয়েছে। কারণ আপনারা তো জানেন, গভর্নমেন্ট ছুটি ছাড়া অন্যগুলি লেখা থাকে না। সেজন্য গণেশ চতুর্থী একটা পড়ে গিয়েছে। ওদিকে, মহরমের একটা পড়ে গিয়েছে। সুতরাং, এগুলি অলওয়েজ লেখা থাকে না। মহরমটা লেখা থাকে, নো ডাউট! কিন্তু আমাদের ক্যালেন্ডার কিছু ভুলভ্রান্তি হয়েছে।’

আরও পড়ুন : মোট করোনা কেসের সংখ্যা ১৫ লক্ষ ছাড়াল, মৃত ৩৪১৯৩

'ক্যালেন্ডারের সঙ্গে আমাদের টেকনিকাল মিসটেক হয়েছিল' বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামী মাসের ২, ৫, ৮, ৯, ১৬, ১৭, ২৩, ২৪, ৩১ তারিখ সম্পূর্ণ লকডাউন থাকবে। অর্থাৎ গণেশ চতুর্থী উপলক্ষ্যে ২২ অগস্ট (রাজ্যর ছুটির তালিকায় থাকে না) এবং মহরম (রাজ্যর ছুটির তালিকায় থাকে) উপলক্ষ্যে ৩০ অগস্টে সম্পূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। তবে একইসঙ্গে মমতা স্বীকার করে নেন, ‘ক্যালেন্ডারের তো দোষ নয়, দোষটা আমাদেরই।’ সেই দিনগুলিই ‘ফাইনাল’ হিসেবে বিবেচনা করার আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রী। পরে নবান্নের তরফে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতেও সেই দিনগুলি দেওয়া হয়।

কিন্তু সেই ‘ফাইনাল’ তারিখও পালটানোর পথে হাঁটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। রাত ৯টা ৫০ মিনিট নাগাদ দুটি টুইটবার্তায় স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে জানানো হয়, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব এবং অনুষ্ঠানের জন্য কয়েকটি দিনে সম্পূর্ণ লকডাউন কার্যকর না করার অনুরোধ এসেছে। তার ভিত্তিতে আগামী ২ এবং ৯ অগস্ট রাজ্যের সার্বিক লকডাউন হচ্ছে না বলে জানানো হয়। ইদের পরদিন এবং রাখির আগেরদিন হচ্ছে ২ তারিখ। ৯ তারিখ কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান না থাকলেও সেদিন বিশ্ব জনজাতি দিবস আছে এবং ১১ তারিখ জন্মাষ্টমী।

যদিও এরকম চূড়ান্ত ‘অপ্রস্তুতি’-র জেরে সমালোচনার মুখে পড়ে রাজ্য সরকার। বিরোধীদের প্রশ্ন, কোনও কি প্রস্তুতি ছাড়াই তাহলে তাড়াহুড়ো করে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল লকডাউনের দিন? যে কারণ দর্শিয়ে সম্পূর্ণ লকডাউন কমিয়ে সাতদিন করা হল, তা নিয়ে আগেভাগেই আলোচনা করা হয়নি কেন? পাশাপাশি ‘ফাইনাল’ তারিখও পরিবর্তন হওয়ায় আমজনতার মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অধিকাংশের বক্তব্য, প্রশাসনের শীর্ষস্তরে এত বিভ্রান্তি থাকলে পরবর্তী ধাপগুলির কী অবস্থা হবে!

বন্ধ করুন