ভারতে এখনও পর্যন্ত ৭ জনের শরীরে মিলেছে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস। এই সংক্রমণ দেখা দিয়েছে কলকাতার এক শিশুর শরীরেও। এরই মাঝে এবার এই ভাইরাস নিয়ে বাংলাকে নিশ্চিন্তে থাকতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে তিনি নাম না করেই প্রাইভেট হাসপাতাল এবং প্রাইভেটে প্র্যাক্টিস করা চিকিৎসকদের দিকে নিশানা করেন। তাঁর অভিযোগ, প্রাইভেট চক্র নাকি এই জ্বর নিয়ে ভয় দেখাচ্ছে মানুষকে। তিনি জানান, ভবিষ্যতে এই সংক্রমণ নিয়ে কোনও আশঙ্কা তৈরি হলে তা সরকারের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে। (আরও পড়ুন: ১৪ বছর আগে কাঁটাতারে ঝুলে মৃত্যু বাংলাদেশি নাবালিকার, মা বললেন - 'ভারতকে যেন…')
গতকাল গঙ্গাসাগর থেকে হাওড়ার ডুমুরজলায় ফিরে এসে মমতা এই এইচএমপিভি নিয়ে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, 'ভাইরাস নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। যদি কোনও চিন্তার কারণ হয়, তবে তা আমরাই জানিয়ে দেব। এই ভাইরাস নিয়ে প্রশাসন ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে। তবে কিছু প্রাইভেট চক্র আছে, যারা টাকা কামানোর জন্য একটু জ্বর হলেই ভয় দেখিয়ে দিচ্ছে।' এর আগে গঙ্গাসাগর থেকে এই নিয়ে মমতা বলেছিলেন, 'এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর দরকার নেই। এই বিষয়ে বৈঠক করে মুখ্যসচিব গাইডলাইন ঠিক করেছেন। অন্য কোনও গাইডলাইন এলে রাজ্য সরকার সেটাও মানবে। রাজ্য প্রশাসন সবসময় মানুষের সেবায় তৈরি রয়েছে।' এর আগে এইচএমপিভি নিয়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। এইচএমপিভি আক্রান্তের উপসর্গের দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে চিকিৎসকদের। এদিকে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারাও। এখনই চিন্তার কোনও কারণ না থাকলেও ঢিলে দিতে নারাজ রাজ্য সরকার।
উল্লেখ্য, শীত এবং বসন্তের মাসগুলিতে আমেরিকায় হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস প্রকোপ দেখা যায়। সাধারণত ঠান্ডা লাগার মতোই উপসর্গ তৈরি করে এই হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস। কিছু ক্ষেত্রে এই সংক্রমণের উপসর্গগুলো কোভিড ১৯-এর মতো মারাত্মক হতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, এইচএমপিভি মোকাবিলায় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহারে সাবধান থাকতে হবে। এদিকে এই ভাইরাসের এখনও কোনও ভ্যাকসিন নেই বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, কোভিডের সঙ্গে এইচএমপিভি-র অনেক ক্ষেত্রেই মিল রয়েছে। এটিও হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। রোগীর ব্যবহৃত জিনিসের সংস্পর্শে এলেও এই রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে দাবি করা হয়। এই সংক্রমণে মূলত শিশু এবং বৃদ্ধরা অসুস্থ হচ্ছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। জ্বর, সর্দি-কাশি ছাড়া গলা ব্যথা থেকে শারীরিক দুর্বলতাও দেখা দিতে পারে এই হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাসের সংক্রমণের জেরে। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, এটি একটি উপরের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, তবে এটি কখনও কখনও নিউমোনিয়া, হাঁপানির মতো নিম্ন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের আকার ধারণ করতে পারে। অথবা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) স্থিতি আরও খারাপ করে তুলতে পারে এই ভাইরাস। এই সংক্রমণের কারণে অসুস্থতার তীব্রতা রোগীর উপর নির্ভর করে। তবে স্বাভাবিক ভাবে ইনকিউবেশন সময়কাল ৩ থেকে ৬ দিন হতে পারে।