অন্যবার একুশে জুলাইয়ের সকালে তিনি যখন টুইট করেন, ততক্ষণ ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনের মঞ্চ ভিড়ে থিকথিক করে। কিন্তু এবার যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে শহিদদের শ্রদ্ধা জানালেন, তখন সেই চেনা ভিড়টাই নেই।
তা অবশ্য আগেভাগেই জানিয়েছিলেন। পরিস্থিতির চাপে চিরাচরিত প্রথায় কিছুটা পরিবর্তন হলেও প্রতিবারের মতো একুশে জুলাইয়ের সকালে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান মমতা। টুইটারে তিনি লেখেন, 'আজ একুশে জুলাই, শহিদ দিবস। ১৯৯৩ সালে আজকের দিনে আগের সরকারের গুলিতে আমাদের ১৩ জন কর্মী নিহত হয়েছিলেন। সেই বিশেষ দিনে, রাজনৈতিক হিংসার শিকার সবাইকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।'
তবে ধর্মতলার খোলা মঞ্চে শহিদ স্মরণ করতে না পারায় কিছুটা আক্ষেপও ঝরে পড়ে মমতা গলা থেকে। নেত্রীর আগুনের বক্তৃতায় কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের যে আবেগের বিস্ফোরণ হয়, তা ভার্চুয়ালি ছুঁতে চাইছে তৃণমূল। সেই বার্তা নিয়েই আরও একটি টুইটে মমতা বলেন, ‘শহিদদের স্মরণে ১৯৯৩ সাল থেকে আমরা বার্ষিক সভার আয়োজন করছি। কিন্তু মহামারী পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধের কারণে এ বছর আমাদের একুশে জুলাইয়ের শহিদ দিবস কিছুটা ভিন্নভাবে আয়োজন করছি। রাজ্যজুড়ে বুথস্তর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার জন্য দুপুর একটা থেকে আমরা একটি অন্যরকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। দুপুর দুটোর সময় প্রতিটি বুথে আমার ভাইবোনেদের উদ্দেশে ভাষণ দেব। মানুষ আমাদের ফের আশীর্বাদ দেওয়ার পর আমরা ২০২১ সালের জুলাইয়ে সবথেকে বড় অনুষ্ঠান করব।’
বাইরে থেকে আত্মবিশ্বাসী মুখ দেখানোর চেষ্টা করলেও সেই কাজটা যে এতটা সহজ নয়, তা হয়তো মমতার থেকে ভালো কেউ জানেন না। আমফান দুর্নীতি, করোনাভাইরাস মোকাবিলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছে তৃণমূল সরকার। বিশেষত আমফান ত্রাণবণ্টনে মাত্রাছাড়া দুর্নীতি তৃণমূলের গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধেছে। মমতার কড়া হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও তাতে লাগাম পড়েনি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ঠিক যেমন কাটমানি ঘায়ে বিদ্ধ হয়েছিল তৃণমূল।
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিধানসভা ভোটের আগের শেষ একুশে জুলাই তাই মমতার কাছে বড় পরীক্ষার। দলের নীচুতলার কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তিনি কী বার্তা দেন, তা আগামী বছর বিধানসভা ভোটের ভাগ্যনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একইসঙ্গে প্রবল প্রতিপক্ষ হিসেবে রাজ্য রাজনীতিতে উঠে আসা বিজেপির আক্রমণাত্মক কৌশলের বিরুদ্ধে কী রণনীতি ঘোষণা করেন মমতা, সেদিকেও তাকিয়ে আছেন সবাই। বিশেষত সম্প্রতি যেভাবে প্রতিটি ঘটনায় আগেভাগে বিজেপি ময়দানে নেমে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেছে, তাতে মমতার একুশে জুলাই যে প্রবল প্রতিকূল হতে চলেছে, তা নিয়ে দ্বিধায় নেই রাজনৈতিক মহল।
তাঁদের বক্তব্য, আগে বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন বহু প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন। মার খেয়েছেন, ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, চ্যালেঞ্জ উতরোছেন। সেই মমতাই কি এবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এবারের একুশে জুলাইয়ের চ্যালেঞ্জ সামলাতে পারবেন? সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।