'জলযুদ্ধ'-এর ঝাঁঝ বেড়েছে। এই আবহে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের বোর্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিদের আগেই পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরই পাশাপাশি এবার আরও আক্রমণাত্মক হয়ে তিনি দাবি করলেন, কলকাতা থেকে ডিভিসির সদর দফতর সরে গেলেও কিছু যায় আসবে না তাঁর। উল্লেখ্য, এর আগে ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক 'টোটাল কাট আপ' করার কথা বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমঙ্গের একাধিক জেলায় যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা ডিভিসির 'অপরিকল্পিত ভাবে জল ছাড়ার' কারণে হয়েছে বলে দাবি মমতার। এই আবহে মঙ্গলবার বোলপুরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, 'কেন্দ্র যদি ডিভিসির সদর দফতর কলকাতা থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে চায়, তাহলে যেতে পারে। যেই সংস্থার জন্যে এত মানুষের মৃত্যু, তারা এখানে থাকুক, সেটা আমি চাই না।' (আরও পড়ুন: রাজ্য আগেই জানত DVC-র জল ছাড়ার কথা, নবান্নের মেমো সামনে আসতেই 'বিস্ফোরণ')
আরও পড়ুন: 'ভিডিয়ো দেখে মনে হচ্ছে...', আরজি কর কাণ্ডে এবার ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্নের বন্যা
এদিকে এর আগে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের বোর্ড থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ সচিব শান্তনু বসু। ডিভিসির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠিও লিখেছেন। এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুই আধিকারিক যে ইস্তফাপত্র দিয়েছেন, তাতে অভিযোগ করা হয়েছে, ডিভিসি অপরিকল্পিতভাবে জল ছাড়ার কারণে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজ্যের অনেক জায়গার মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আর সেই ঘটনার প্রতিবাদে তাঁরা দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে বলে দাবি করেছেন রাজ্য সরকারের দুই আধিকারিক। (আরও পড়ুন: বিকাশের বদলে RG কর কাণ্ডে নির্যাতিতার পরিবারের হয়ে লড়বেন বৃন্দা, জানেন তিনি কে?)
আরও পড়ুন: বাংলায় এবার শিল্পতালুক হবে বন্ধ কারখানার জমিতে,আসতে পারে কয়েক হাজার কোটির লগ্নি
এই আবহে মঙ্গলবার বোলপুরে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বলেন, 'প্রতি বছর ডিভিসি জল ছাড়ায় ম্যান মেড ফ্ল্যাড তৈরি করা হয়। ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলে আমাদের চিন্তা হয়। বাংলার বর্ষায় বাংলায় বন্যা হয় না। ঝাড়খণ্ডের জলে বাংলায় প্রতি বছর বন্যা করা হয়। এখন ডিভিসির জলটা না কি জলশক্তি মন্ত্রক থেকে ছাড়া হয়। ফলে তারা আমাদের না জানিয়ে যে ভাবে জল ছেড়েছে। রাজ্যের বিদ্যুৎ সচিব ডিভিসিতে ডিরেক্টর। পদত্যাগ করে দিয়েছেন। সবই তো নিয়ে গেছে কলকাতা থেকে সরিয়ে। বাকি কী আছে? কলকাতায় শুধু একটা বিল্ডিং পড়ে থাকবে আর কলকাতার কথা শুনবে না। আর বাংলায় জল ছাড়বে। মানুষ মারবে। মানুষ আগে না বিল্ডিংয়ের একটা কাঠামো আগে? ওখানে তো আরাম কেদারায় বসে থাকেন, জল ছাড়ে তো জলশক্তি মন্ত্রক।'
আরও পড়ুন: সকাল থেকেই ভাসতে শুরু করেছে বাংলা, ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস কোথায় কোথায়?
তিনি এরপর আরও বলেন, 'আমরা চাই না সেই সংস্থাকে যারা জল ছেড়ে মানুষ মারে। ডিভিসি তো তৈরি হয়েছিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। ২০ বছর ধরে ড্রেজিং করে না। আমি তো বাংলাটাকে দার্জিলিংয়ের পাহাড় বানাতে পারব না। আকাশও আমার হাতে নেই, বাতাসও আমার হাতে নেই। ইতিহাস, ভুগোল তো আমি তৈরি করিনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ডিভিসি আছে। তার পরেও আমরা তাদের বলি, যখন ৮০ শতাংশ ভরে যাবে তোমরা ১০ হাজার করে করে ছাড়ো। মাটি সহ্য করতে পারবে। একসঙ্গে ৫ লাখ জল ছাড়লে মাটি কী করে সহ্য করবে? তিন তলা সমান জল এসেছে এবার, ভাবতে পারেন?'