রাজ্যের পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবারে নবান্নে এক সভায় তিনি ঘোষণা করেন, সব পুরসভার কাজকর্মের উপর আতসকাচ দিয়ে নজরদারি করা হবে। পুরসভাগুলির কাজের মার্কশিট তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি, যেখানে প্রতিটি পুরসভার কাজের বিশদ পর্যালোচনা করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, অনেক পুরসভা দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। তিনি বলেন, ‘পারফরম্যান্স রিভিউ হবে, অনেক ভদ্রতা দেখিয়েছি। কিন্তু ভদ্রতা দেখানো মানে জমি জবরদখল, কাজ হবে না, চলবে না।’ পুরসভাগুলির কাজ না হওয়ায় সরকারের বদনাম হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা।
বেআইনি নির্মাণ নিয়ে কড়া বার্তা
বেআইনি নির্মাণের বিষয়ে মমতা বলেন, ‘বেআইনি নির্মাণ চলছেই, বাড়ি ভাঙলেও আমাদের দোষ, কেউ দেখছে না। সরু পিলার করে বাড়ি বানিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, ভাঙলে দায় আমাদের।’ হাওড়ার বেআইনি নির্মাণ নিয়ে আগের মেয়রকে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টভাবে জানান, তৃণমূলে টাকা তোলার মাস্টার কিংবা তোলাবাজ নেতা নয়, জনসেবক প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘আমি মানুষকে ভালবাসি। যারা মানুষকে ভালবাসে না তাদের এক মিনিটে সরিয়ে দেব।’
আরও পড়ুন। সিভিক ভলান্টিয়ারদের দৈনিক মজুরি বাড়াল রাজ্য সরকার, বিজ্ঞপ্তি জারি করল নবান্ন
কোন পুরসভার পারফরম্যান্স কেমন?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরসভাগুলির কাজের রিভিউ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেন।
পানীয় জল
ভাল পারফরম্যান্স: উলুবেড়িয়া, হালিশহর, কলকাতা, বৈদ্যবাটি, বাঁকুড়া।
বাজে পারফরম্যান্স: আলিপুরদুয়ার, বালি, বরাগনগর, শিলিগুড়ি, শান্তিপুর।
আবাসন
ভাল পারফরম্যান্স: উলুবেড়িয়া, জঙ্গিপুর, হাবড়া, কৃষ্ণনগর, মধ্যমগ্রাম।
বাজে পারফরম্যান্স: বিধাননগর, আসানসোল, রায়গঞ্জ, কাঁথি।
সাফাই ও বর্জ্য নিষ্কাশন
ভাল পারফরম্যান্স: কলকাতা, বসিরহাট, বৈদ্যবাটি, উত্তরপাড়া, উত্তর দমদম, নবদ্বীপ।
বাজে পারফরম্যান্স: কাঁথি, ডালখোলা, পানিহাটি, হাওড়া, কুপার্স ক্যাম্প, সিউড়ি।
আধিকারিকদের সতর্কবার্তা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, আধিকারিকদের পারফরম্যান্সও রিভিউ করা হবে। তিনি বলেন, ‘অনেক আধিকারিক মনে করেন, আমি দুই বছর কাটিয়ে দিই কোনওভাবে। তারপর তো চলে যাব। আপনি ২ বছর থাকলেও মনে রাখবেন আপনার পারফরমেন্স রিভিউ করা হবে এবং আপনি যাওয়ার আগে আপনি স্বচ্ছতা বজায় রেখেছেন কিনা এখন থেকে একটা রিভিউ কমিটি তৈরি করা হবে। যেখানে ভিজিল্যান্স, এসিবি, সিআইডি, এডিজি আইনশৃঙ্খলাকে রাখা হবে।’
বিজেপির প্রতিক্রিয়া
মমতার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র ও রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য পাল্টা তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, ‘লেকটাউন, শ্রীভূমিতে জলাভূমি বুজিয়ে নির্মাণ হচ্ছে। মাঝেরপাড়ায় ভবানী কমপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে পুকুর বুজিয়ে, তুলে দেওয়া হয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে, কিন্তু কাউন্সিলরের তৎপরতায় ব্যবস্থা নিচ্ছে না বাগুইআটি থানার পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, তা হলে কলকাতার ১০ লক্ষ মানুষ ঘর হারাবে।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরসভার কাজের উপর কঠোর নজরদারি চালাতে প্রস্তুত। রাজ্যের উন্নয়ন ও জনসেবার স্বার্থে তিনি কোনওরকম ঢিলেমি বরদাস্ত করবেন না বলেই স্পষ্ট করেছেন। এবার দেখার বিষয়, তার এই উদ্যোগে কতটা ফলপ্রসূ হয় এবং পুরসভাগুলি নিজেদের কাজে কতটা পরিবর্তন আনতে পারে।