অনুমতি মেলেনি নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু জলপাইগুড়ির ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাথাপিছু ১.২ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার জলপাইগুড়ির সভা থেকে তিনি ঘোষণা করেন, ঝড়ে যাঁদের বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের মাথাপিছু ১.২ লাখ দেওয়া হবে। তবে একলপ্তে সেই টাকা মিলবে না। প্রাথমিকভাবে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের অ্যাকাউন্টে ৪০,০০০ টাকা ঢুকবে। বাড়ির কাজ যে শুরু করা হয়েছে, সেটার সার্টিফিকেট দেখানো হলে বাকি টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন রাজ্যের শাসক দলের নেতা। যদি রাজ্য সরকারের তরফে সেই টাকা দেওয়া হয়, তাহলে অভিষেক কীভাবে সেই আর্থিক অনুদানের ঘোষণা করতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ অভিষেক রাজ্য সরকারের কোনও পদে নেই। তিনি ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। আর তৃণমূল সেনাপতি। তাহলে কি তৃণমূলের তরফে সেই অর্থ দেওয়া হচ্ছে?
অভিষেক অবশ্য নিজেই জানিয়েছেন যে জলপাইগুড়িতে ক্ষতিগ্রস্তদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। শুক্রবার জলপাইগুড়ির ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতিনিধি) যাঁরা আছেন, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী আজ জানিয়েছেন (যে রাজ্য সরকার তাঁদের পাশে আছে)। তাঁদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ছিল, আছে, থাকবে।’
কারা কারা আর্থিক অনুদান পাবেন?
সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাজ্য আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আপনারা (টাকা পেয়ে যাবেন)। যদি রবিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকে, তাহলে খুব বেশি হলে সোমবার হবে। যাঁরা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সোমবারের মধ্যে তাঁরা সবাই ১.২ লাখ টাকা করে পাবেন। অবিলম্বে ৪০,০০০ টাকা দেওয়া হবে। ২০,০০০ টাকা দেওয়া হয়েছে (যে পরিমাণ অর্থ প্রদানের অনুমতি দিয়েছে কমিশন)। আর ইউসি (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) জমা দিলে বাকি ৬০,০০০ টাকা পেয়ে যাবেন আপনি।’
আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তরা টাকা পাবেন?
তবে গত ৩১ মার্চের ঝড়ে যাঁদের বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের আপাতত রাজ্য সরকারের তরফে নতুন করে কোনও অর্থ দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অভিষেক (কমিশনের অনুমতি মত ৫,০০০ টাকা দেওয়া হয়েছে)। তিনি জানিয়েছেন, দলীয়ভাবে ওই সব পরিবারের পাশে থাকবে তৃণমূল। যতটা সামর্থ্য, ওই সব পরিবারকে ততটা সাহায্য করা হবে। সেজন্য আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা যোগাযোগ করবেন। তাঁদের একটি ফর্ম ফিল-আপ করতে হবে। তারপর তাঁদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা বলে আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন: ‘সব পুলিশ খারাপ নন, তিন-চারজনের নাম আমার কাছে আছে’, হুঁশিয়ারি মমতার
কমিশনকে হুংকার অভিষেকের
নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়াই জলপাইগুড়ির ঝড়ে দুর্গতদের ১.২ লাখ টাকা প্রদান করা হওয়ায় যে আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে পড়তে পারে তৃণমূল, তা খুব ভালোভাবেই জানেন অভিষেক। আর সেটা জেনেই অভিষেক বলেছেন, ‘তারপর যদি নির্বাচন কমিশনের মনে হয় ব্যবস্থা নেবে, তৃণমূল সরকার আইন লঙ্ঘন করে মানুষকে পরিষেবা দিয়েছে, তুমি নিও। যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিও। কিন্তু তৃণমূল সরকার থাকতে কেউ মানুষকে তাঁর অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখতে পারবে না।’