বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু দল যত বড় হয়েছে তত বেড়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। এই পরিস্থিতি না পাল্টালে তা ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলবে। সেটা বুঝতে পেরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত হুগলি জেলার সংগঠনকে ঠিক করতে সব নেতাদের ডাকা হয়েছিল যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে। দিলীপ যাদব, প্রবীর ঘোষাল, অপরূপা পোদ্দার, বেচারাম মান্না–সহ হুগলির তাবড় নেতাদের নিয়ে বৈঠক চলাকালীনই ফোন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানেই তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এবার থেকে তিনিই হুগলি জেলার সংগঠন দেখবেন।
একজন মুখ্যমন্ত্রীর ওপর রাজ্যের একাধিক দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে। সেখানে সব সামলে জেলা সংগঠন দেখা খুবই চাপের ব্যাপার। সেখানে এমন কী ঘটল যে তাঁকেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে হল? আসলে কোনও ফাঁক তিনি রাখতে চান না। তাই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূলনেত্রী নিজে ফোন করে অনেকক্ষণ কথা বলেছেন। আর অন্যের কাঁধের বোঝা কমিয়ে তা নিজের কাঁধে নিয়েছেন বলে মনে করছেন দলের একাংশ।
সূত্রের খবর, জেলার অধিকাংশ বিধায়কের ক্ষোভ জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবের বিরুদ্ধে। তবে দিলীপ যাদবকে সভাপতি পদ থেকে না সরানো হলেও তাঁর ডানা ছাঁটা হয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ, এই বৈঠকে একটি কোর কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই বৈঠক করে কর্মসূচি ঠিক করবেন, সমস্যা দেখবেন। হুগলির নেতাদের কোন্দল চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। নাম না করে দিলীপ যাদবকে ঘাড় ধাক্কা দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না।
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের পাঁচ নেতার কাছে ফোন যায় সর্বোচ্চ নেতৃত্বের। দলীয় সূত্রে খবর, তাঁদের বলা হয়, আপনারা কি হুগলি থেকে পার্টিটাকে তুলে দেবেন? আরামবাগ মহকুমায় তো তুলেই দিয়েছেন। কোনও কর্মসূচি নেই। তারপরই এদিনের বৈঠকে বিরোধ ঠেকাতে নিজে হস্তক্ষেপ করেন নেত্রী।
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনের আগে নদিয়া জেলা সংগঠন নিয়েও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল তৃণমূল নেতৃত্বকে। মহুয়া মৈত্র, গৌরীশঙ্কর দত্ত, অরিন্দম ভট্টাচার্য, শঙ্কর সিং– এক একজন নেতার এক এক গোষ্ঠী। তখন নবান্নে ডেকেও বৈঠক করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শেষপর্যন্ত লোকসভা ভোটে রানাঘাট আসন হারতে হয় তৃণমূলকে। তাই হুগলি নিয়ে আর এসব চান না তিনি।